ক্ষমতার দ্বন্দ্বে অনিশ্চিত ভারোত্তোলনের ভবিষ্যৎ। হতাশ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও (এনএসসি)। গত ৯ই জুন নির্বাচিত কমিটি বাতিল করে অ্যাডহক কমিটি গঠনের পর থেকেই শুরু দু’পক্ষের অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগ। ভারোত্তোলন আরো আলোচনায় এসেছে কয়েকদিন আগে এশিয়ান ভারোত্তোলন ফেডারেশন থেকে একটি চিঠি আসার পর। যে চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচিত কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি গঠন ঠিক হয়নি। বর্তমান অ্যাডহক কমিটির অবস্থা থেকে বিষয়টি মেনে নিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) দিল মোহাম্মদ। এ খেলাটি নিয়ে আমাদের যেমন দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল দুঃখজনকভাবে আমরা তা করতে পারছি না। খেলাটিকে গতিশীল করতে সকলের মতামত নিয়ে একটা সমাধান জরুরি। দীর্ঘদিন নির্বাচন না দেয়া এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগে মহিউদ্দিন আহমেদের কমিটি অ্যাডহক কিমিটি গঠন করে দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপনে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও বর্তমান নেতৃত্বের অভিযোগ দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এমনকি অফিসিয়াল কাগজপত্র এবং অফিসের কম্পিউটারে রক্ষিত ডাটা মুছে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কাজল দত্ত। তিনি বলেন, আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদকে কয়েক দফা চিঠি দেয়ার পরও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। কাগজপত্র উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়ে এনএসসির কাছে চিঠি দিলেও সুরাহা হয়নি। আমরা আগামী মাসে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করতে আগ্রহী। কিন্তু এ আয়োজনের জন্য ক্রীড়া সামগ্রী কোথায় কি পরিমাণ আছে তা আমরা জানি না। বিষয়টি স্বীকার করেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক দীল মোহাম্মদ। ‘আমরা খেলাটির মঙ্গলের জন্য আগের কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠন করেছিলাম। কিন্তু তারা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন দেয়নি। খেলাটিকে গতিশীল করতে সকলের মতামত নিয়ে একটা সমাধান জরুরি। তার মতে বর্তমান কমিটি খেলাটি গতিশীল করার চেয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো চলছে। এভাবে চলতে থাকলে তো ভারোত্তোলনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। যদিও এনএসসির এই পরিচালকের কথা মানতে নারাজ কাজল দত্ত। আমরা চেষ্টা করছি খেলাটি কীভাবে গতিশীল করা যায়। কিন্তু আগের কমিটির অসহযোগিতার কারণেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর সেই মহিউদ্দিন আহাম্মেদ বলছেন ভিন্ন কথা। ‘আমি আগেই বলেছি এটা একটা অবৈধ কমিটি। যার বৈধতা দেয়নি এশিয়ান ভারোত্তোলন ফেডারেশন। এরা আমার বিরুদ্ধে যা বলেছে সেটাও সত্য নয়। আমি চাইবো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সকলের মতামত নিয়ে সম্ভাবনাময় এই খেলাটির যাতে মঙ্গল হয় তাই করবেন’। ফেডারেশনের এমন অস্থিরতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ভারোত্তোলকরা। এসএ গেমসে পদক জয়ী ভারোত্তোলক জহুরা আক্তার রেশমা জানান, এমনিতেই নানা জটিলতার মধ্যে চলতে হচ্ছে আমাদের। অনুশীলন হচ্ছে অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধার মধ্যে। তার সঙ্গে যদি ক্ষমার দ্বন্দ্বে আমাদের প্রশিক্ষণ ও নানা ইভেন্টে অংশগ্রহণ বিঘ্নিত হয়, তবে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন হারিয়েই যাবে। কর্মকর্তারা দ্বন্দ্বে জড়ালেও তাদের তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মহিউদ্দিন স্যার এখন ক্ষমতায় নেই। তিনি তো নানা আন্তর্জাতিক ইভেন্টে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান কমিটি মসনদে বসে আছে। যত দুর্ভোগ আমাদের বেলায়। পদকের সম্ভাবনা থাকার পরও আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে পারছি না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এনএসির কাছে আবেদন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে আমরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হই এ বিষয়টি দয়া করে নিশ্চিত করুন। খেলোয়াড়দের আকুতিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস ফেডারেশনের জটিলতা নিরসনের চেষ্টা করছেন। এশিয়ান ভারোত্তোলন ফেডারেশন থেকে চিঠি আসার পর দ্রুত নির্বাচনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। যা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন অ্যাথলেটরা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.