দেশের অর্থনীতিতে পাঁচ চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে নতুন বছর। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে- বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব আয়ে গতি বাড়ানো, রফতানি বহুমুখী করা, অর্থ পাচার রোধ এবং রেমিটেন্সে (প্রবাসী আয়) প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ।
শনিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৫ মাসের তথ্যে দেখা গেছে, রাজস্ব আদায়ে মন্থরগতি চলছে। এছাড়া দেশের রফতানি আয়ের বড় অংশই গার্মেন্ট পণ্যনির্ভর। ক্রমেই কমছে রেমিটেন্স প্রবাহ। বাড়ছে বেকারত্ব।
পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আরও প্রবল করে তুলছে। ফলে উৎপাদনমুখী খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় সম্পদ বণ্টনে অদক্ষতা দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ গড়ে দশমিক ০৪ শতাংশ হারে কমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার কয়েক বছর ধরে কমছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা কমে ৬ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ায়। গত অর্থবছর তা আরও কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
দেশ থেকে অবৈধ অর্থের পাচার বাড়ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে দেশ থেকে ৫৪০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। ২০১১ সালে তা বেড়ে ৫৯২ কোটি, ২০১২ সালে ৭২২ কোটি এবং ২০১৩ সালে তা আরও বেড়ে ৯৬৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৪ সালে তা আরও বাড়বে। এছাড়া জিডিপির অনুপাতে দেশজ সঞ্চয় কমছে। ২০১২-১৩ সালে জিডিপির অনুপাতে সঞ্চয় ছিল ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৯ দশমিক ০২ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষে তা আরও কমতে পারে, যা ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত করবে।
উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন পর্যাপ্ত নয়। এ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপিতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর ব্যয় ২৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এরপর সরকারি বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতায় বিনিয়োগের কার্যকারিতা কমে যায়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি কমছে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি নিুমুখী। যেখানে ২০১১-১২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল, ২০১২-১৩ সালে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৩-১৪ সালে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৪-১৫ সালে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসে। সর্বশেষ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৬০ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৩ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা রাজস্ব হয়েছে।
বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকার দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে উচ্চ ঋণ নেয়ায় সুদের পরিশোধ বাড়ছে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদ পরিশোধ ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৪৬ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ১২ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ২৭৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে রফতানি আয় ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়লেও আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এদিকে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ কমেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি দেখায় যে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে মোট রেমিটেন্স এসেছিল ৬১৭ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ৫২০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
উন্নয়নের পর্যালোচনায় দেখানো হয়, শ্রমশক্তি জরিপের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি দেখায় ২০০০-২০১০ সময়ে বেকার জনসংখ্যা বার্ষিক ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০০০ সালে বেকার সংখ্যা ১৭ লাখ। ২০১০ সালে ২৬ লাখে উন্নীত হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.