অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছে যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ শপিংমলে প্রথম ধাপে শতাধিক ব্যবসায়ীর অনুকূলে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। শনিবার যমুনা ফিউচার পার্কে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের হাতে দোকানের বরাদ্দপত্র তুলে দেন যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম।
যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম বলেন, এ মহতী কাজে আমরা আপনাদের পাশে থাকতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি। আশা করছি, এখানে আপনারা আরও ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম বলেন, আমি ভাবিনি এত অল্প সময়ের মধ্যে এক সঙ্গে এত ব্যবসায়ীকে এখানে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে পারব। একটু কষ্টসাধ্য হলেও গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু ব্যবসায়ীকে জায়গা করে দিতে পেরেছি। যদিও এজন্য ওই ব্লকের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এভাবে যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবে। ক্ষতিগ্রস্ত আরও ব্যবসায়ীকে পর্যায়ক্রমে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবে যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ।
এ সময় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যমুনা বিল্ডার্সের পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হাসান, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের জিএম সাহেদ আলী, ডিজিএম দেবাশীষ কুমার রায় ও কামরুল হাসান। স্বাগত বক্তব্যে যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় তলার ‘এ’ ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যবসায়ীকে এক সঙ্গে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। কারণ উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরার অভিজাত বাসিন্দাসহ রাজধানীবাসী তাদের নৈমিত্তিক কেনাকাটা করে থাকেন ফিউচার পার্ক থেকে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অন্য কোনো শপিংমলে সব ব্যবসায়ীকে এভাবে এক সঙ্গে জায়গা দেয়ার সক্ষমতা নেই। একমাত্র যমুনা ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষ সে সুযোগ করে দিতে পেরেছে। প্রতিটি ফ্লোর আলাদা আলাদা পণ্যের জন্য বরাদ্দ রাখা হলেও ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সবাইকে এক সঙ্গে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এ মার্কেটের ভেতরে খোলামেলা পরিবেশ থাকায় আগের চেয়ে এখানে ব্যবসায়ীরা স্বস্তিদায়ক পরিবেশে ব্যবসা করতে পারবেন।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন মওলা তার বক্তৃতায় বলেন, আগুন লাগার পর একমাত্র যমুনা গ্রুপের কাছ থেকে আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা পেয়েছি। তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই আমরা আগের মতো চাঙ্গা ব্যবসায় ফিরতে পারব। অন্যদের মধ্যে ব্যবসায়ী তৌহিদ আজিজ খান বলেন, আগুনে সর্বস্বান্ত হওয়ার পর অনেকে খেলা করেছেন। কিন্তু যমুনা ফিউচার পার্কের পক্ষ থেকে যে সম্মান দিয়ে সমাদর করা হয়েছে তাতে পুনরায় মনোবল ফিরে পেয়েছি।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী এসএম খালেদ বলেন, আগুন লাগার পর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করি। অনেক ঘোরাঘুরির পর যমুনা ফিউচার পার্কে এসে যে সহানুভূতি, ভালোবাসা পেয়েছি তাতে ব্যবসায়ীরা অভিভূত। ২-৪ জন করে সংগঠিত হয়ে আজ (শনিবার) আগুন লাগার ২২-২৪ দিন পর বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সব ব্যবসায়ী একত্র হতে পেরেছি। এখন বাকি কর্মজীবন যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে শুরু করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আগুনে অনেক কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এখনও বেঁচে আছি। ব্যবসার অভিজ্ঞতা পুড়ে যায়নি। আর দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে আমাদের সুদিন ফিরে আসবে বলে আশা করছি। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কের সুনাম ও আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনে অল্প দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীরা আগের হাসি হাসতে পারবেন। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আরও বক্তব্য রাখেন আনোয়ার হোসেন সুজন, মিজানুর রহমান, জামান মোহাম্মদ মনির প্রমুখ।
দোকান বরাদ্দ পাওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের সব জনপ্রিয় পণ্য নিয়েই যমুনা ফিউচার পার্কে ব্যবসা শুরু করবেন তারা। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানের কসমেটিক্স, ড্রাই ফুড, টয়লেট্রিজ পণ্যমাসগ্রী, ফ্রোজেন ফুড, শিশুখাদ্য, চকোলেট ও ক্রোকারিজ সামগ্রী ফিউচার পার্কে আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের ক্রেতাদের ফিউচার পার্কে এসে তাদের নতুন দোকান ঘুরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২ জানুয়ারি রাতে গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.