বাংলাদেশের ফুটবল: বাস্তবতা ও করণীয় সেমিনার
ভুটানের কাছে হারের পর গভীর সংকটে বাংলাদেশের ফুটবল। এই সংকট থেকে উত্তরণে নানা উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বসে নেই সাবেক ফুটবলার ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়া সাংবাদিকরাও। যার যার অবস্থান থেকে ফুটবল উন্নয়নে নানা দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বাংলাদেশ ফুটবল: বাস্তবতা ও করণীয় শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ক্লাবে। বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক ও চ্যানেল২৪ এর স্পোর্টস এডিটর দিলু খন্দকার। সেমিনারে বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ছাড়াও ১৫ জন বক্তা বাফুফের ব্যর্থতার সমালোচনার পাশাপাশি দেশের ফুটবল উন্নয়নে আগামীর করণীয় নিয়ে কথা বলেন। নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ভুটান হারের পর আমি নানা জায়গা থেকে নানা রকম সমালোচনা শুনে এসেছি। আমি কাউকে ভয় পাই না। আগামীতে দেশের ফুটবলের ইউটার্ন ঘটানোর জন্য চার বছরের একটি কর্ম পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমার বিশ্বাস এটার সঠিক বাস্তবায়ন ঘটলে দেশের ফুটবলের চিত্রই পাল্টে যাবে। পরে বাফুফে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সালাউদ্দিনের পক্ষে ১০ মিনিটের প্রজেকশনের মাধ্যমে বাফুফের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। যদিও সালাউদ্দিনের এসব পরিকল্পনা মনঃপুত হয়নি উপস্থিত অনেক বক্তার। বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক সালাউদ্দিনের নানা রকম প্রতিশ্রুতি শুনে বলেন, যে ব্যক্তি নয় বছরে দেশের ফুটবলের জন্য কিছুই করতে পারেননি, তিনি কিভাবে আগামী তিন বছরে দেশের ফুটবলের চিত্র পাল্টে দেবেন। আমিনুলের মতো ব্যর্থতার জন্য একা সালাউদ্দিনকে দায়ী করতে নারাজ তরফদার রুহুল আমিন। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের এই কর্ণধার বলেন, কাজী সালাহউদ্দিন একা কাজ করেন না। একটা কমিটি আছে। তাহলে কমিটি কী করে? কমিটিগুলো বলতে গেলে ব্যর্থ। এটা দুঃখজনক। আবার সেই ব্যর্থ কমিটিগুলোই দায়িত্ব পাচ্ছে। তাহলে ফল তো একই হবে। এ কারণে সালাউদ্দিনের আগামী কর্ম পরিকল্পনায় নতুন কাউকে দেখতে চান এই ক্রীড়া সংগঠক। কোচ মারুফুল হক দেশের ফুটবল উন্নয়নে কোচিং এডুকেশনের ওপর জোর দিতে বলেন। ভুটানের উদাহরণ টেনে মারুফুল বলেন, বি আর সি লাইসেন্স কোচিং কোর্স আমাদের চেয়ে ভুটানের অনেক বেশি হচ্ছে। কোচের সংখ্যাও অনেক বেশি। যার ফল ভুটান পেয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক বিশ্বাস বলেন, ফুটবল উন্নয়নে ক্রীড়া পরিষদ সবসময়ই আছে এবং থাকবে। আপনারা কি করতে চান প্রস্তাব দেন। আমরা সহযোগিতা করবো। ফুটবলের ওপর সরকারের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পরিষদ সব কিছুই করবে। দেশের ফুটবলের এই দুরবস্থার জন্য রাজনীতিকে দায়ী করেন প্রথম আলোর উপ ক্রীড়া সম্পাদক পবিত্র কুন্ডু। তিনি বলেন, আবাহনী-মোহামেডানের রাইভাল এখন আর নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আবাহনী নেতৃত্ব দেয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে মোহামেডান। এ কারণে দল দুটির সাপোর্টার নষ্ট হয়ে গেছে। সকলের সমালোচনার জবাবে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নেই তখন আমিনুলরা রাস্তায় ফুটবল খেলার জন্য আন্দোলন করেছে। আমরা মাঠে ফুটবলটা রেখেছি। ব্যর্থতার কথাই সবাই বলে, সফলতার কথা কেউ বলে না। আমাদের সময়ে এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেছি। সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ শিরোপা জিতেছি। মেয়েরা ভালো করছে। এরপর আমি বলবো ভুটানের ফলাফল যাতে আমাদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হয় সেভাবে কাজ করতে হবে। কাউকে ঢালাউ ভাবে দোষারোপ করা যাবে না। পবিত্র কুন্ডের সমালোচনার জবাবে সালাম মুর্শেদী বলেন, মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ যতই মাইকিং করা হোক দর্শক আসবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত দু’টি দলে স্টার থাকবে না। সর্বোপরি ফুটবল উন্নয়নে সকলকে পাশে চান গেল আট বছরে কিছু করতে না পারা বাফুফে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.