আদিখ্যেতা, হিংসা আর ধ্বংস নয়,ফেইসবুক হোক সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বাহন (পর্ব -১)

আদিখ্যেতা, হিংসা  আর ধ্বংস  নয়,ফেইসবুক হোক সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বাহন (পর্ব -১)

জেবুন্নেসা চপলা 

মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক কর্মী 

সাস্কাটুন , কানাডা। 

কিছুদিন আগে ফেইসবুক ব্যবহার নিয়ে একটা বিশ্লেষণধর্মী লিখা লিখেছিলাম যা প্রথম আলো , টরন্টোর নতুন দেশ এবং চ্যানেল আই অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এই লিখাটি লিখেছি উত্তরের গোধূলির  পাঠকদের জন্য। পূর্বপ্রকাশিত লিঙ্কটি এখানে সংযুক্ত করা হলো অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের জন্য :

http://www.prothom-alo.com/durporobash/article/1035540/%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%95-%E0%A6%B9%E0%A7%8B%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%83%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0

ফেইসবুক যা সারা পৃথিবীতেই আজ একটি শক্তিশালী,কার্যকরী এবং জনপ্ৰিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বলা হয়ে থাকে সম্প্রতি আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফলকে ঘুরিয়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম । চলুন শুরুতেই  জেনে নেয়া যাক কত দিন ধরে চলছে এর ব্যবহার এবং এর সুফল ও কুফল। এইতো মাত্র সেদিন ২০০৪ সালে ফেইসবুককে জুকেরবার্গ এবং তাঁর  গবেষক  দল পরিচয় করিয়েছেন সারা বিশ্বের সাথে। মূলত তাঁর  বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্যই হার্ভার্ড এর কম্পিউটার সাইন্স এর এই ছাত্র ফেইসবুক এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার উদ্যোগটি নিয়েছিলেন। পড়া লেখা শেষ হয়ে গেলেও বন্ধুরা নিত্য নতুন কি বিষয় নিয়ে ভাবছে ,কে কি করছে কমিউনিটির জন্য , কোথায় আছে , কেমন আছে , কেমন করে নতুন আবিষ্কারের সন্ধানে একসাথে কাজ করা যায় ভবিষ্যতে ইত্যাকার বিষয় নিয়ে পরস্পরের সাথে একটা নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্দেশ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সৃষ্টি করেছিলেন তাঁরা সকলে  মিলে । সেদিনকি জুকেরবার্গ ভাবতে পেরেছিলেন ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রামু পল্লী এবং নাসিরনগর দগ্ধ হবে কোনো একদিন ? তিনি কি জানতেন ধর্ম ব্যবসায়ীরা , কালো রাজনীতিবিদরা সামাজিক গণ মাধ্যমকে ব্যবহার করবে মৌলবাদী  জঙ্গি সেনা রিক্রুট করবার জন্য ? তিনি কি জানতেন, ISIS এর দোসর হয়ে কাজ করবার জন্য ফেইসবুক হবে উৎকৃষ্ট মাধ্যম ? তিনি কি জানতেন সেই স্বঘোষিত বিশেষ ” সর্ব শ্রেষ্ঠ ” ধর্মাবলম্বীরা ” বিধর্মী কাফেরদের ” বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রচারের উত্তম এবং নিরাপদ একটি মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করবে পৃথিবীতে ধর্মীয় কোন্দল বাড়াবার জন্য ?তিনি কি জানতেন, ফেইসবুক এর মাধ্যমে মানুষ তাদের চরম আদিখ্যেতা প্রকাশের মাধ্যমে সমাজে একধরণের নেতিবাচক প্রভাব তৈরী করবে ? আমরা জানি একজন স্রষ্টা  সমাজের কল্যাণের কথা ভেবেই তাঁর  সৃষ্টিশীল জগতে মনোনিবেশ করেন । কারো সৃষ্টি তখনই কুফল বয়ে আনে যখন তার অপব্যবহার শুরু হয় এর ব্যবহারকারীদের দ্বারা । জুকেরবার্গ  হয়তো নির্বাক হয়ে ব্যথিত হৃদয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে তাঁর সৃষ্টির সর্বনাশা অপব্যবহার  অবলোকন করছেন নীরবে নিস্তেজ হয়ে   !

মুঠো ফোনের মতোই সকলের হাতে হাতে আজ ইন্টারনেট এবং ফেইসবুক দেশে,বিদেশে সর্বত্র । ফলশ্রুতিতে  ঘুমাতে যাবার আগে মানুষ একবার জানান দিচ্ছে ফেইসবুক বনধুদের আবার ঘুম থেকে উঠেই চোখ কচলাতে কচলাতে আর একবার জানাচ্ছে। কখন কিভাবে স্নান করবে (সুইমিং পুল / সমুদ্র /নদী ), সারাদিন কি খাবে,কি রান্না করবে, কোথায় কার সাথে  ঘুরতে যাবে, কি কাপড় পড়ে ঘুরছে, কোন ব্র্যান্ড এর প্রসাধনী ব্যবহার করলো , কি উপহার পেলো বা কিনলো , কোত্থেকে জিনিস পত্র কিনলো, কখন পেটে ব্যথা , কখন ঘাড় ব্যথা, সর্দি কাশীর মতো নিত্য নৈমত্তিক অসুখ বিসুখ ধরলো আর ছাড়লো, তিন মাস পনর  দিন পর ডেটিং, প্রিয় কুকুর, বেড়ালের ছবি সর্বক্ষণ পোস্ট করে যাওয়া ইত্যাদি ধরণের একান্ত ব্যক্তিগত, অর্থহীন, অন্যের জন্য বিরক্তিকর সেটা না ভেবেই পাবলিক ফোরাম এ অনেকেই ফেইসবুক এর অপব্যবহার করছেন  । অভিধানের পাতায় ‘ব্যক্তিগত’ বলে যে শব্দটি আছে তা বুঝি হারাতে বসেছে এই ফেইসবুক এর যুগে। আর অতিরিক্ত আদিখ্যেতা তারাই দেখায় যাদের ব্যক্তিত্ব অন্তঃসার শূন্য সে কথা বুঝিয়ে বলাটা মুশকিল যদি না কেউতা  নিজ থেকে উপলব্ধি করে। 

চলবে 

(অটোয়ার আশ্রম ম্যাগাজিনে  লিখাটি পূর্বে প্রকাশিত ) 

please find the attached photo.

ফটো ক্রেডিট  : রঞ্জন দত্ত