প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেয়া ছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং আরও পাঁচটি পৃথক সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন। জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় দেয়া তার ১৯ মিনিটের ভাষণটি ছিল একজন দূরদর্শী বিশ্বনেতার মতো। এ ভাষণে তিনি মানবতার স্বার্থে বিশ্ব থেকে সংঘাত দূর করে শান্তির পথে এগিয়ে যেতে অভিন্ন অবস্থানে উপনীত হতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে এই লক্ষ্যে জাতিসংঘকে একটি টেকসই ও প্রাসঙ্গিক সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার শপথগ্রহণ করতে বলেছেন সবাইকে। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি তার অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ রেখেছেন। সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রের জোগান বন্ধ এবং তাদের প্রতি নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন না দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মানবিকতার যে প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন, তা কয়েন করার মতো একটি শব্দ। বস্তুত হিউম্যানিটিই এখন হওয়া উচিত বিশ্ব-বিবেকের স্লোগান। শেখ হাসিনা যখন সাগরে ডুবে যাওয়া ৩ বছর বয়সী শিশু আয়নাল কিংবা আহত হওয়া ৫ বছরের শিশু ওমরানের প্রসঙ্গ তোলেন, তখন তিনি বিশ্ব মানবতারই প্রতীকী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। নিষ্ঠুরতা এখন বিশ্বব্যাপী এক চরম অপসংস্কৃতির নাম। স্থানীয় পর্যায়ে ঘটছে বটে, তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে এত নিষ্ঠুরতা আর কখনও দেখা যায়নি। এ অবস্থায় একটি মানবিক বিশ্বে ফিরে যাওয়াই আমাদের সবচেয়ে বড় আকাক্সক্ষা। নিষ্ঠুরতা বিশ্বসভ্যতাকে ধ্বংস করতেও উদ্যত হয়েছে। বর্তমান সভ্যতার ভবিষ্যৎ কী, তা অনেকাংশে নির্ভর করছে নিষ্ঠুরতার বিপরীতে মানবিকতার চর্চার আন্দোলন কতটা সফল হবে তার ওপর। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগ-শোক, অশিক্ষা, বেকারত্ব ইত্যাদির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মানুষ অনেকাংশেই বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু নতুন উপসর্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে নিষ্ঠুরতা। শেখ হাসিনা তাই যথার্থই মানবিকতার ইস্যু নিয়ে হাজির হয়েছেন বিশ্বদরবারে।
বলাবাহুল্য, নিষ্ঠুরতার সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জঙ্গিবাদ- স্থানীয় ও বৈশ্বিক। আইএসের সদস্যরা যখন নিরপরাধ মানুষকে এক লাইনে বসিয়ে তাদের শিরñেদ করে, সেই মর্মান্তিক দৃশ্যে থর থর কেঁপে উঠি আমরা। অথবা এই বাংলাদেশে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় যখন একের পর এক বিদেশী নাগরিককে গলা কেটে হত্যা করা হয়, তখন সমগ্র বিশ্ব হতভম্ব হয়ে পড়ে। এই নিষ্ঠুর জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করতে হবে যে কোনো মূল্যেই। প্রধানমন্ত্রী নির্ভুলভাবে জঙ্গিবাদ বিস্তারে অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রের জোগানকে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। সমগ্র বিশ্ব থেকে এই অপশক্তিকে নির্মূল করতে প্রধানমন্ত্রী যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা অনুসরণ করা হলে এ ক্ষেত্রেও সাফল্য আসবে বৈকি। আমরা মনে করি, কোনো রাষ্ট্রেরই ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনৈতিক খেলা চলতে পারে না। কোনো কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে বটে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উপস্থিত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা। জঙ্গিবাদ এমন এক মতবাদ, যা একদিন এর স্রষ্টারও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই অপশক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের আপস হতে পারে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.