‘ক্যালে জঙ্গল’ শরণার্থী শিবিরের শিশুদের জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করা হচ্ছে। বাধ্য করা হচ্ছে বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে একই বাসস্থান ব্যবহারে। সিটিজেনস ইউকে নামে একটি দাতব্য সংস্থা এমন দাবি করেছে। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়েছে, সিটিজেনস ইউকের পরিচালিত সেফ প্যাসেজ কর্মসূচি এ বিষয়ে কাজ করেছে। এরপর তারা বলেছে, গত মাসে ক্যালে জঙ্গল উচ্ছেদ করে শরণার্থী শিশুদের যেসব অভ্যর্থনা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে সেখান থেকে তাদের জোর করে ফলের বাগানে শ্রম দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের আশ্রয়ের বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। অথবা তাদের পর্যাপ্ত তথ্য দেয়া হয় না। এ কারণে তাদের অনেকেই পালাতে শুরু করেছে। ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত অভ্যর্থনা কেন্দ্রের ৩৩টি বালকের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় টেলিফোনে। এর মধ্যে তিনটি বালক গবেষকদের বলেছে, তাদের জোর করে ফলের বাগানে কাজ করানো হয়। অন্য তিনজন বলেছে, শিশুদের জন্য নির্মিত এমন আবাসনে বয়স্কদের সঙ্গে তাদের বসবাস করতে বাধ্য করানো হচ্ছে। শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ বালক বলেছে, এসব অভ্যর্থনা কেন্দ্রে তারা নিরাপদ বোধ করে না। শতকরা ৩৯ ভাগ বলেছে, এখানকার চেয়ে তারা ক্যালে জঙ্গল ক্যাম্পে বেশি ভালো ছিল। একটি শিশু বলেছে, এখানকার জীবন মনে হয় জেলখানা। আমাদের খেলার কিছুই নেই। সারাক্ষণ আমাদের রুমে আবদ্ধ থাকতে হয়। এছাড়া এই আবাসন আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। যাদের সঙ্গে আমাদের থাকতে বাধ্য করা হয় তাদের বয়স ২০ বছরের বেশি। আরেকটি শিশু সহায়তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছে। সে বলেছে, দয়া করে আমাদের রক্ষা করুন। প্রয়োজনে যা যা করার তা-ই করুন। বৃটেনে আমাদের পরিবার আছে। আমরা পশু নই, মানুষ। আমরা এখানে অবরুদ্ধ হয়ে আছি। সিটিজেনস ইউকে বলেছে, এরই মধ্যে অভ্যর্থনা কেন্দ্র থেকে পালিয়েছে দুটি বালক। অন্য দু’জন পালানোর কথা বিবেচনা করছে। তাদের একজন বলেছে, অন্যরা যখন পালিয়ে যাচ্ছে তখন আমি কেন এখানে থাকবো। আশ্রয়ের আবেদন নিয়ে কর্তৃপক্ষ কতদূর এগিয়েছে বা তারা কি করছে সে বিষয়টি বুঝতে পারছে না অনেকে। তারা ক্যালে জঙ্গল ক্যাম্প ছেড়ে আসার পর তিনটি বালক এখনও কোনো সরকারি কর্মকর্তার দেখা পায়নি। শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ বালক বলেছে, তাদের পরিষ্কার কাপড় দেয়া হয়নি। তবে সবাই বলেছে, তাদের গোসল করার সুবিধা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে তাদের গরম পানি দেয়া হয়। দিনে কমপক্ষে তিনবার খাবার দেয়া হয়। দুটি বালক বলেছে, স্টাফরা তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না। সিটিজেনস ইউকে’র রাবি জ্যানেট ডারলে বলেছেন, ফ্রান্সে এসব শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। সেফ প্যাসেজ টিম ব্যাপকভাবে শিশুদের শ্রমে বাধ্য করার রিপোর্ট পেয়েছে। ক্যালে জঙ্গল ক্যাম্প ভেঙে দেয়ার পর দাতব্য সংস্থা ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রচারকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা জানতে পারছেন ক্যালে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা শিশুরা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। এমন খবর পাওয়ার পর তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। উচ্ছেদের আগে এসব অভ্যর্থনা কেন্দ্র উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি বলে ফরাসি কর্তৃপক্ষেরও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ওই ক্যাম্পে বসবাসকারী ২০০০ মানুষের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত বৃটেনে ফিরে এসেছে প্রায় সাড়ে তিনশ’ শরণার্থী শিশু। বৃটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যত দ্রুত সম্ভব বৈধ নাগরিকদের বৃটেন ফিরিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.