টেস্টে সদ্য ৪০০ ম্যাচের ম্যাজিক্যাল ফিগার স্পর্শ করলো পাকিস্তান। আর দুবাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওই ম্যাচে জয় নিয়ে গড়লো ইতিহাস। এটি ছিল দিবারাত্রির টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম জয়। ১৯৫২ সালে টেস্ট অভিষেক পাকিস্তান ক্রিকেট দলের। প্রথম ম্যাচ ৬৪ বছর আগে প্রায় এ দিনে ইতিহাসে তাদের প্রথম টেস্টে মাঠে নামে পাকিস্তান। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে ওই ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাট হাতে আলো ছড়ান ‘রিয়েল লিটল মাস্টার’ খ্যাত হানিফ মোহাম্মদ। বর হাতে দ্যুতি দেখান পেসার ফজল মেহমুদও। যদিও পাকিস্তান ওই ম্যাচে হার দেখে ইনিংস ও ৭০ রানে। প্রথম জয় প্রথম জয়ে তাদের অপেক্ষাটা ছিল ক্ষণিকের। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে লখ্নৌয়ে ইনিংস ও ৪৩ রানে জয় কুড়ায় পাকিস্তান। ম্যাচের নিষ্পত্তি হয় চতুর্থ দিনের শুরুর ১৫ মিনিটেই। দিল্লি টেস্টে ১৩ উইকেট নেন ভারতীয় লিজেন্ড ভিনু মানকড়। তবে দ্বিতীয় টেস্টের বাইরে ছিলেন তিনি। প্রথম সেঞ্চুরিয়ান টেস্টে পাকিস্তানের ব্যাট হাতে ইতিহাসের প্রথম বল মোকাবিলা করেন নজর মোহাম্মদ। পাকিস্তানের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও তিনিই। ৮ দিনের বিরতিতে লাখ্নৌয়ে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ‘ক্যারি দ্য ব্যাট’ ইনিংসে ১২৪ রান করেন এ পাক ওপেনার। এতে ব্যাট হাতে তিনি ক্রিজে কাটান ৮ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত সাময়িকী উইজডেন জানায়, টেস্ট ক্রিকেটে কোনো দলের ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট হাতে ক্রিজে কাটানো প্রথম খেলোয়াড় তিনি। তবে নিজ দেশে এক দুর্ঘটনায় হাতে আঘাত নিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি। পরে কোচ ও পাকিস্তান দলের নির্বাচকের ভূমিকায় দেখা যায় এ ক্রিকেট লিজেন্ডকে। ম্যাচে প্রথম ১০ উইকেট পাকিস্তানের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল পেসার ফজল মেহমুদের। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে মেহমুদের নৈপুণ্য শেষে টেস্ট মর্যাদা পায় পাকিস্তান। আর পাকিস্তানের বল হাতে ম্যাচে ১০ উইকেটের প্রথম নজিরটি তারই। ভারতের বিপক্ষে লাখ্নৌ টেস্টের দুই ইনিংসে ফজল মেহমুদের শিকার ছিল পাঁচ ও সাত উইকেট। টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করেন তিনি। আর পাকিস্তানের প্রথম ‘পোস্টার বয়’ ফজল মেহমুদই। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্রিলক্রিমের বিজ্ঞাপনে ক্যামেরার সামনে পোজ দেন কুচকুচে কালো চুলের ফজল মেহমুদ। প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান এটি ৫৮ বছরের পুরনো ঘটনা। তবে ব্যাট হাতে পাকিস্তানি লিজেন্ড হানিফ মোহাম্মদের এক রেকর্ড অটুট রয়েছে এখনও। পাকিস্তানের ব্যাট হাতে প্রথম ত্রি-শতক হাঁকানোর পথে হানিফ মোহাম্মদ ক্রিজে কাটান ১৬ ঘণ্টা ১০ মিনিট। টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু ইনিংস। ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী ইনিংসেরও আখ্যা পায় হানিফ মোহাম্মদের এ কীর্তি। বারবাডোজে ৪৭৩ রানে পিছিয়ে ম্যাচের মাত্র দ্বিতীয় দিনে ফলোঅনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছিল পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওই ইনিংসে হানিফ মোহাম্মদ করেন ৩৩৭ রান। প্রথম সিরিজ জয় খুব সময় নেননি পাকিস্তানিরা। অভিষেকের তিন বছরের মাথায় সিরিজ জয়ের গৌরব কুড়ায় পাকিস্তান। এতে ব্যাটে-বলে আলোকিত নৈপুণ্যটা ছিল স্পিনার জুলফিকার আহমেদ ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ইমতিয়াজ আহমেদের। করাচি পেস্টে ৮৩ ওভারের স্পেলে জুলফিকার আহমেদের ইকনোমি গড় ছিল ১-এর কম। ম্যাচে ১১ উইকেট নেন জুলফিকার। নিজ মাটিতে তিন ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০তে জয় কুড়ায় পাকিস্তান। লাহোর টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান ইমতিয়াজ। টেস্ট ইতিহাসে ওটা কোনো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের ইনিংসের শেষ চার উইকেটে সংগ্রহ ছিল ৪৫০ রান। ভিনদেশে প্রথম সিরিজ জয় ভিনদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের জন্য দীর্ঘ ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয় পাকিস্তানিদের। ১৯৭২ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে সিরিজ জয়ের স্বাদ নেয় তারা। ওয়েলিংটন, ডানেডিন ও অকল্যান্ডে ব্যাট হাতে আলো ছড়ান পাকিস্তানের লিজেন্ডারি খেলোয়াড় সাদিক মোহাম্মদ, মুস্তাক মোহাম্মদরা। আর বল হাতে ছড়ি ঘোরান লেগ স্পিন তারকা ইন্তেখাব আলম। সিরিজের সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষ চারজনই ছিলেন পাকিস্তানের। প্রথমবার ‘নাম্বার ওয়ান’ অধিনায়ক ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৮৮ সালের ভারত সফরে সিরিজ জয়ের স্বাদ নেয় পাকিস্তান। ভারত সফরে পাকিস্তানের ওটা ছিল প্রথম সিরিজ জয়। পরে তারা হয়ে ওঠে অজেয়। ইংল্যান্ড সফরে সিরিজ জয়ের গৌরব কুড়ায় ইমরান বাহিনী। বিলাত সফরে ওটা ছিল পাকিস্তানের প্রথম সিরিজ জয়। এ সময় পাকিস্তানিদের টানা তিন বছর সিরিজ হারের স্মৃতি ছিল না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.