নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের স্বার্থে নির্বাচনী এলাকায় সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এ দাবি জানান। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫২তম জন্মদিন উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। রিজভী বলেন, সেনা বাহিনী মোতায়েন করলে ভোটাররা ভয়-ডরহীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। তাই বিএনপি চায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক। নারায়ণগঞ্জ যেহেতু গডফাদারদের শহর হিসেবে পরিচিত তাই সেখানে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করলে সাধারণ ভোটাররা ন্যূনতম নির্বাচনী পরিবেশ পাবে। তাতে ভোটাররা তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবে। ভয়ে, আতঙ্কে কোনো গডফাদারকে ভোট দিতে হবে না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশের গণতন্ত্র ফিরে পেতে সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির সহযোগিতা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতাও একটি রাজনৈতিক টার্ম। নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। দেশের স্বাধীনতার জন্য যদি সামরিক বাহিনী গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করতে পারে, তাহলে গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, দেশের স্থিতিশীলতা এবং ভোটের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নির্ভয়ে ভোটদান নিরাপদ করতে সামারিক বাহিনীর সাহায্য নেয়া অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত। দেশের জনগণের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের সামরিক বাহিনীর সহায়তা নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। বিএনপির এই নেতা বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও এর কাঠামো সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব টেলিভিশন দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু যা বলেছেন তা সারবত্তাহীন, শিষ্টাচারবর্জিত, অশোভন। রক্তপাতহীন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ প্রস্তাবকে যুগোপযোগী হিসেবেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, শক্তিশালী ও প্রভাবমুক্ত হয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তারা ধরাশায়ী হবেন বলেই খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে তার ক্ষোভ ফেটে পড়েছে। রিজভী বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার রকিবমার্কা নির্বাচন কমিশন দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলেছে। ভোটকেন্দ্রগুলিতে এখন কোনো ভোটার যায় না, সেখানে চতুষ্পদ প্রাণীদেরই বিচরণ দেখা যায়। কারণ ব্যালটবাক্স ভরে ফেলা হয় আগের রাতেই। আর যে কয়জন ভোটার ভোট দিতে যায় তাদের অনেকেই প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন না। তাদের স্থান হয় গোরস্তানে। কারণ রকিবমার্কা নির্বাচন কমিশন মৃত্যুবাণে কিনেছেন ভোটারদের নিরাপত্তা। দেশী-বিদেশী সকল নির্বাচন পর্যবেক্ষক মহল বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দাবি তুলেছেন। রিজভী বলেন, তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই- খালেদা জিয়ার প্রস্তাব যদি জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করা হয় তাহলে কী ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ দেশী-বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা জঙ্গীবাদকে উৎসাহিত করার জন্যই শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের দাবি তুলছেন? রিজভী বলেন, দেশবাসী মনে করে-এদের ৭২ থেকে ৭৫ রক্তাক্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই আজকের জঙ্গিবাদের প্রেরণা। তিনি বলেন, দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই- গত ১৮ই নভেম্বর রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বিএনপি চেয়ারপারসন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে যে প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছেন তা আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার পথকে সুগম করবে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাবনাকে নিয়ে তথ্যমন্ত্রী যে কুরুচিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সেটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার টার্গেট তারেক রহমান। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তার নামের মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। সরকারের অনুগত বিচারপতিদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিংসাপরায়ণ হয়ে তারেক রহমানকে বিপর্যস্ত করার জন্য তার বিরুদ্ধে এ রায়। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম বক্তব্য দেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.