লীগের শুরুতে বেশ সাদামাটা মনে হয়েছিল ঢাকা আবাহনীকে। প্রথম পাঁচ রাউন্ডের তিনটিতেই ড্র করেছিল আকাশী হলুদ শিবির। ওই সময় পর্যন্ত গোল করতে পারছিলেন না সানডে সিজুবা, লি টাকরা। ওই সময়টাতে দুর্দান্ত গতিতে ছুটছিল চট্টগ্রাম আবাহনী ও রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। লীগ যত গড়িয়েছে ততই খোলস থেকে বেরিয়েছে আবাহনীর আক্রমণভাগ। তাদের কল্যাণেই ১৫তম রাউন্ড শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আবাহনী এখনো অপরাজিত। যে আবাহনীর পাঁচ রাউন্ড পর্যন্ত গোল করার মানুষ ছিল না, লীগে সর্বোচ্চ গোল এখন তাদের। সর্বোচ্চ গোলদাতাও ঢাকা আবাহনীর সানডে সিজুবা। এবারের লীগে শীর্ষ গোলদাতাদের প্রথম সাতটি স্থানই বিদেশিদের দখলে। সানডের ১৬ গোলের পর ১৪ গোল নিয়ে ব্রাদার্সের এনকোচা কিংসলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। এরপর যথাক্রমে বিজেএমসির স্যামসন ইলিয়াসু (১০ গোল), ব্রাদার্সের অগাস্টিন ওয়ালসন (১০ গোল), শেখ জামালের ওয়েডসন (৯ গোল), আবাহনীর লি টাক (৯ গোল), চট্টগ্রাম আবাহনীর লিওনেল প্রিয়েক্স (৬ গোল), শেখ জামালের ডার্লিটন (৬ গোল), রহমতগঞ্জের সিও জুনাপিও (৬ গোল)। দেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে গোলদাতাদের তালিকায় সমান ৬ গোল করে যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর উইঙ্গার জাহিদ হোসেন (৬ গোল) ও মোহামেডান স্পোার্টিং ক্লাব লিমিটেডের তৌহিদুল আলম সবুজ (৬ গোল)। চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে লীগ শুরু করে ঢাকা আবাহনী। পরের ম্যাচে দুর্বল ফেনী সকারের বিরুদ্ধে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা জয় পায় ১-০ গোলে। বিজেএমসির সঙ্গেও জয় এসেছে একই ব্যবধানে। পরের দুই ম্যাচে মুক্তিযোদ্ধা ব্রাদার্সের সঙ্গে আবারো পয়েন্ট হারায় ঢাকার জায়ান্টরা। ফরোয়ার্ডরা গোল না পাওয়ায় প্রথম লেগে তিন নাম্বারে থেকে শেষ করতে হয় ঢাকা আবাহনীকে। দ্বিতীয় লেগে এসে একেবারে বদলে যায় ঢাকা আবাহনী। ১৫ ম্যাচে একমাত্র অপরাজিত থাকা দলটির ঝুলিতে জমা পড়েছে ৩৫ পয়েন্ট। সাত পয়েন্ট কমে দুই নাম্বারে আছে চট্টগ্রাম আবাহনী। প্রথম লেগে দুবার খেলতে থাকা রহমতগঞ্জ আছে পয়েন্ট টেবিলের চার নাম্বারে। গোলের তালিকায় শীর্ষেও ঢাকা আবাহনী। এ পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে তারা গোল করেছে ৩৪টি। হজম করেছে মাত্র ১২টি গোল। মজার ব্যাপার হলো, ৩৪ গোলের মধ্যে আবাহনী সেকেন্ড লেগের পাঁচ ম্যাচেই করেছে ১৭ গোল। আবাহনীর ৩৪ গোলের ২৪টিই এসেছে দুই বিদেশি ফরোয়ার্ড সানডে সিজুবা ও লি টাকের মাধ্যমে। এর মধ্যে নাইজেরিয়ান সানডে করেছেন ১৬টি আর ইংলিশ তারকা লি টাকের পা থেকে এসেছে ৯ গোল। লীগে হ্যাটট্রিক হয়েছে দুটি। এ দুটিও করেছেন আবাহনীর এই দুই ফরোয়ার্ড। চলতি লীগে বড় জয়ও ঢাকা আবাহনীর। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ১৫তম রাউন্ডে তারা ৬-১ গোলে হারিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে। পয়েন্ট টেবিলে আবাহনীর সঙ্গে সমানতালে দৌড়াতে না পারলেও গোল দেয়ার দিক দিয়ে দুই নাম্বারে আছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ১৫ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নাম্বারে থাকা দলটি এখন পর্যন্ত দিয়েছে ২৯ গোল। পক্ষান্তরে তাদের জালে ঢুকেছে ২৫ গোল। গোলদাতাদের তালিকায় ১৪ গোল নিয়ে সানডের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন ব্রাদার্সের এনকোচা কিংসলে। ওয়েডসন এনসেলমি থাকা পর্যন্ত শিরোপা লড়াইয়ে ছিল শেখ জামাল। হাইতিয়ান এই ফরোয়ার্ড ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেয়ার পর ভুগছে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। ১৫ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে তিন নাম্বারে থাকা দলটি সেকেন্ড লেগের চার ম্যাচে দিয়েছে মাত্র তিন গোল। হজম করেছে পাঁচটি। অথচ এরাই প্রথম লেগের ১১ ম্যাচে করেছিল ২৪ গোল। চট্টগ্রাম আবাহনীও সেকেন্ড লেগে এসে গোল দেয়ার মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না। এই ফেইজের পাঁচ ম্যাচে তারাও করেছে মাত্র তিন গোল। অথচ এরাই প্রথম লেগের ১১ ম্যাচে করেছিল ২০ গোল। সবচেয়ে করুণ অবস্থা শেখ রাসেলের। ১৫ ম্যাচে তারা গোল করেছে মাত্র ১১টি। যদিও ১১ গোলের বদান্যতায় ১৫ পয়েন্ট নিয়ে অনেকটা নির্ভার বিগ বাজেটের দলটি। শেখ রাসেলের চেয়ে বেশি গোল দিয়েও রেলিগেশন শঙ্কায় মোহামেডান, উত্তর বারিধারা ও ফেনী সকার। ১৫ ম্যাচে দুই জয়ে সাদা-কালোদের ঝুলিতে আছে ১৪ পয়েন্ট। লীগে এখন পর্যন্ত তারা গোল করেছে ১৪টি। সমান ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট পাওয়া উত্তর বারিধারা এখন পর্যন্ত লীগে গোল দিয়েছে ১৭টি। সর্বোচ্চ গোল হজমের রেকর্ডও তাদের দখলে। ১৫ ম্যাচে গড়ে দুটি করে গোল হজম করেছে পয়েন্ট টেবিলের ১১ নাম্বারে থাকা দলটি। ১০ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকা ফেনী সকার ১৪ গোলের বিপরীতে হজম করেছে ২৮টি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.