টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় নিয়ে লড়াইয়ে ফিরলো রাজশাহী কিংস। গতকাল তারা ১২ রানে জয় কুড়ায় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। ব্যাট হাতে বিপরীত চিত্র দেখান দু’দলের অধিনায়ক। ম্যাচের প্রথমার্ধে রাজশাহীকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন ব্যাট হাতে আসর জুড়ে নিষ্প্রভ থাকা ড্যারেন স্যামি। রংপুর রাইডার্সের মাঠের খেলায় জৌলুশহীন দেখাচ্ছিল অধিনায়ক নাঈম ইসলামকে। গতকাল সুযোগ এলেও ব্যাট হাতে কিছু করে দেখাতে পারেননি রংপুর অধিনায়ক। ১০ বলে ব্যক্তিগত ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন নাঈম। আর ১৬৩ রানের টার্গেটে ১৫০/৫ সংগ্রহ নিয়ে ইনিংস শেষ করে রংপুর। নাঈম ইসলাম যখন ব্যাট হাতে ক্রিজে যান তখন জয়ের জন্য রংপুরের দরকার ছিল ১৮ বলে ৪৪ রানের। ৩৬ বলে ৬৪ রানের ব্যক্তিগত ইনিংস ও হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন রাজশাহীর অপর অপরাজিত ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। চলতি বিপিএল-এ রাজশাহীর এটি তৃতীয় জয়। ৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই রয়েছে রংপুর। সমান ম্যাচে রাজশাহীর সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে গতকাল ব্যাট হাতে ইনিংসের শুরুতে স্বস্তি ছিল না রাজশাহী কিংসের। তবে অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির ব্যাটের জোরে শেষ পর্যন্ত রংপুর রাইডার্সকে বড় টার্গেট দেয় রাজশাহী কিংস। ১৬২/৫ সংগ্রহ নিয়ে ইনিংস শেষ করে রাজশাহী। ৭ নম্বরে ব্যাট হাতে হার না মানা ইনিংসে ১৮ বলে ৪৪ রান করেন রাজশাহীর ক্যারিবীয় তারকা ড্যারেন স্যামি। এতে ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় স্যামি হাঁকান তিনটি ৪ ও চারটি ছক্কা। ৩০ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন রাজশাহীর পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান উমর আকমল। ষষ্ঠ উইকেটে এ দু’জন গড়েন ৩৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রানের জুটি। এ নিয়ে রাজশাহীর তিন জয়ে ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠলো বিদেশি তারকাদের হাতে। আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে দুই সাক্ষাতেই জয় কুড়ায় রাজশাহী। আর দুই ম্যাচেই সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে রাজশাহীর ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইংলিশ অলরাউন্ডার সামিত প্যাটেলের হাতে। ব্যাটিংঅর্ডারে অবনতি নিয়ে চার নম্বরে খেলতে দেখা গেল সৌম্য সরকারকে। তবে ভোগান্তি ফুরায়নি তার। রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে গতকাল ১০ বলে ৮ রান করেন সৌম্য সরকার। আর রাজশাহী কিংসের বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলামের ডেলিভারিতে নিজের স্টাম্প ভাঙতে দেখেন তিনি। এবারের বিপিএল-এ ৭ ম্যাচে সৌম্য সরকারের সংগ্রহ যথাক্রমে ২৩, ১৩*, ২, ১৪, ২২, ৩ ও ৮। গতকাল ব্যক্তিগত ৫ রানে উইকেট খোয়ান রংপুরের পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আনোয়ার আলী। এতে ১৫.৪ ওভার শেষে রংপুর রাইডার্সের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১০৭/৪-এ। আর শেষ পর্যন্ত আসরে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসটি হাঁকালেও দলকে জয় এনে দিতে ব্যর্থ হন মোহাম্মদ মিঠুন। ৩৬ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে মিঠুন হাঁকান তিনটি চার ও ৪টি ছক্কা। এতে আসরে ২৪৭ রান নিয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের মেহেদী মারুফকে ছাড়িয়ে যান মিঠুন। ৭ ম্যাচে মারুফের সংগ্রহ ২৪৪ রান। ২৪১ রান নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন সাব্বির রহমান। আসরের ৭ ইনিংসে পাঁচবার অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেন মিঠুন। ৭ ম্যাচে মিঠুনের সংগ্রহ ৬৪*, ৪৯*, ৪৫*, ৬২, ০, ১৫* ও ১২*। আগের ম্যাচে চট্টগ্রামে ১৮২ রান তাড়া করে জয় কুড়ায় রাজশাহী কিংস। চলতি আসরে সবচেয়ে বড় রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড এটি। তবে মিরপুরে ভিন্ন চেহারা দেখায় রাজশাহী কিংস। টস জিতে রাজশাহী কিংসকে ব্যাটিংয়ে পাঠান রংপুর রাইডার্স অধিনায় নাঈম ইসলাম। আর ব্যাট হাতে শুরুতেই হোঁচট খায় রাজশাহী কিংস। দলীয় ৪ রানে উইকেট খোয়ান রাজশাহীর স্বদেশি ওপেনার মুমিনুল হক। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৭ রানের জুটি গড়েন সাব্বির রহমান ও অপর ওপেনার জুনাইদ সিদ্দিকী। তবে অল্প ব্যবধানে জুনাইদ ও সাব্বির সাজঘরে ফিরে গেলে চাপে পড়ে রাজশাহী কিংস। জুনাইদ ২১ বলে ২৩ ও সাব্বির রহমান ২৪ বলে করেন ৩১ রান। ব্যক্তিগত ১৭ রানে উইকেট দেন রাজশাহীর আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় সামিত প্যাটেল। আর ব্যক্তিগত ৬ রানে মেহেদী হাসান মিরাজ সাজঘরে ফিরে গেলে ১৩.৫ ওভার শেষে ৯২/৫ সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা নামে রাজশাহী কিংস শিবিরে। রংপুর রাইডার্সের বল হাতে তিন ওভারের স্পেলে ১৫ রানে দুই উইকেট নেন ইংলিশ বাঁ-হাতি স্পিনার লায়াম ডসন। একটি করে উইকেট নেন সোহাগ গাজী ও আরাফাত সানি। আসরে ৭ ম্যাচে সোহাগ গাজীর শিকার ১০ উইকেট। খুলনা টাইটানসের পেস তারকা শফিউল ইসলাম, চিটাগং ভাইকিংসের মোহাম্মদ নবী ও ঢাকা ডায়নামাইটসের মোহাম্মদ শহীদের শিকার সমান ১৪ উইকেট। খুলনার পাকিস্তানি পেসার জুনাইদ খান ১২ ও রংপুরের শহীদ আফ্রিদি, চিটাটগং ভাইকিংসের তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন ১১টি করে উইকেট। গতকাল শহীদ আফ্রিদি রংপুর দলে ছিলেন না । আসরের ২৫ ম্যাচে ১৩ বার ম্যাচসেরা পুরস্কার উঠলো বিদেশি তারকাদের হাতে। আর এতে বিদেশি তারকারা এ পুরস্কার জিতলেন টানা পাঁচ ম্যাচে। ঢাকায় প্রথম পর্বের ১৪ ম্যাচে বিদেশি তারকারা সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন ৫ বার। তবে চট্টগ্রামে ১০ ম্যাচে সাতবার ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে বিদেশিদের হাতে। সংক্ষিপ্ত স্কোর টস: রংপুর রাইডার্স, ফিল্ডিং রাজশাহী কিংস: ২০ ওভার; ১৬২/৫ (স্যামি ৪৪*, আকমল ৩৩*, সাব্বির ৩১, জুনাইদ ২৩, সামিত প্যাটেল ১৭, ডসন ২/১৫, মুক্তার আলী ১/৫, সোহাগ ১/৩২, সানি ১/১৭)। রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভার; ১৫০/৫ (মিঠুন ৬৪*, নাসির জামশেদ ২৭, মোহাম্মদ শাহজাদ ১৮, নাঈম ইসলাম ১৪*, নাজমুল ২/১৯, মোহাম্মদ সামি ১/২৬, সামিত প্যাটেল ১/২৮)। ফল: রাজশাহী কিংস ১২ রানে জয়ী ম্যাচ সেরা: ড্যারেন স্যামি (রাজশাহী)
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.