উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্য ও ওষুধ বিক্রি, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ভোক্তার কাছ থেকে পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায়, খাদ্যে ভেজাল মেশানোসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে বেড়েছে জরিমানার হারও। সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সাত বছরে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ২ হাজার ৪১টি। অর্থাৎ অভিযোগ বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০৫ শতাংশ। আর আলোচ্য সময়ে ৭২ হাজার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে দোষী সাব্যস্ত করে ২২ হাজার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১৫ কোটি ৫২ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ৫২৫ জন অভিযোগকারীকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৬৭৫ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতে, সভা সেমিনার করে অভিযোগের বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ফলে প্রতিদিনই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কয়েকগুণ। তবে এসব অভিযোগের প্রায় ৯২ শতাংশই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে অপরাধীদের। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের খুচরা বিক্রয়মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ এসব লেখা না থাকা। নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্য আদায় করা, ভেজাল বা মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত পণ্য বিক্রয় করা, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা, প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাসময়ে সরবরাহ না করা। এ ছাড়া রয়েছে ওজনে বা পরিমাপে কম দেয়া, পণ্যের নকল উৎপাদনসহ বিভিন্ন অনিয়ম। এসব অভিযোগে ২০১০ সালে ভোক্তারা ৭৩টি অভিযোগ করেছিল। আর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে অভিযোগ জমা পড়েছে ১ হাজার ১০০টি। অর্থাৎ ২০১৬ সালের প্রতিমাসে গড়ে অভিযোগ এসেছে ১১০টি। এই হিসাবে ছয় বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ২৭টি। সাত বছরে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ২ হাজার ৪১টি। অর্থাৎ অভিযোগ বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০৫ শতাংশ। এর মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৮৭৯টি। আর তদন্তাধীন রয়েছে ১৬২টি। অর্থাৎ নিষ্পত্তির হার ৯২ শতাংশ। সাত বছরে দেশব্যাপী ৭২ হাজার ১২৫টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে তদারকি কার্যক্রম চালিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর বিভিন্ন ধারায় সর্ব শেষ গত ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত করে ২২ হাজার ২১৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা আদায়ের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি ৫২ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আইন অনুযায়ী ৫২৫ জন অভিযোগকারীকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৬৭৫ টাকা প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট ১৫ কোটি ৪৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৫ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, সাধারণ ভোক্তা যাতে ভালো সেবা পেতে পারে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা বেশি দরকার বলে তিনি জানান। জানা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে একাধিকবারও জরিমানা করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হলেও খাতভিত্তিক অভিযোগের কোনো পরিসংখ্যান নেই ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে। ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় সরকার ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ চালু করে। আইনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা বিধান রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কোনো কাজ সংঘটিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (১ কাওরানবাজার) অথবা প্রতিটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বরাবর অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস), ফ্যাক্স, ই-মেইল বা অন্য কোনো উপায়ে অভিযোগকারীর পূর্ণাঙ্গ নাম, বাবা ও মায়ের নাম, ঠিকানা, ফোন, ই-মেইল, ফ্যাক্স (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করে আবেদন করা যাবে। এজন্য কোনো ধরনের ফি দিতে হবে না। তবে কেনাকাটার প্রমাণ হিসেবে অভিযোগকারীর কাছে দোকানের রসিদ থাকতে হবে। ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ বা নকল পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ক্ষেত্রে পণ্যের নমুনাও দিতে হবে। কোনো ভোক্তার দায়ের করা অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে অভিযুক্ত বিক্রেতাকে যে পরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হয়, তার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে প্রণোদনা হিসেবে দেয় অধিদপ্তর।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.