মিয়ানমারে মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে গ্রামের পর গ্রামে তাণ্ডব চালাচ্ছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাদের হামলার শিকার প্রতিটি গ্রাম প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্ষিত হয়েছেন শত শত নারী। নিরপরাধ মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারছে। শিশুদের জ্বলন্ত আগুনে ছুড়ে দিয়ে হত্যা করছে। দশ বছরের বেশি বয়সী ছেলেদের খুন করছে। স্বজনদের সামনেই অনেককে জবাই করা হচ্ছে। এছাড়া অনেকের হাত-পা কেটে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় লোমহর্ষক চিত্র উঠে আসে। এসব অপরাধের ঘটনা থেকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে এমন দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিশেষজ্ঞ। লন্ডনের কুইনমেরি বিশ্ববিদ্যালয়- কিউএমইউএলের আইন স্কুলের ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টেট ক্রাইম ইনিশিয়েটিভের (আইএসসিআই) গবেষকরা মিয়ানমারের সরেজমিন চালানো এক গবেষণায় রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া অন্যরাও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। শুক্রবার দুপুরে টেকনাফের লেদা আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মাজুমা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। মাজুমা খাতুন কামাল হোসেনের স্ত্রী। রাখাইন রাজ্যের মংডু থানাধীন কেয়ারি প্রাং গ্রামের কামাল হোসেনের স্ত্রী মাজুমাসহ ছোট ছোট পাঁচ সন্তান নিয়ে বাস করছিল। দিনমজুরির আয়ে কোনো মতে সংসার চলছিল তাদের। গ্রামের মানুষের সঙ্গেও ছিল সুসম্পর্ক। বিপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন। হঠাৎ করেই দুর্যোগ নেমে আসে কামাল হোসেনদের জীবনে। ৮-১০ দিন আগে সেনা পোশাকে অস্ত্রধারীরা কেয়ারি প্রাং গ্রাম ঘেরাও করে। এ সময় অন্যদের মতো কামাল হোসেনের বাড়িও আক্রান্ত হয়। অস্ত্রধারীরা কামাল হোসেনের হাত-মুখ বেঁধে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। মাজুমা যুগান্তরকে বলেন, আমার চোখের সামনে গ্রামের অন্য পুরুষের সঙ্গে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায় সেনারা। এ সময় তারা আমার স্বামীর চোখ বেঁধে ফেলে, কসটেপ দিয়ে মুখ আটকে দেয়। আমি তাদের অনেক অনুনয় করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। উল্টো রাতে অস্ত্রধারী সেনারা আমার ঘরে ঢুকে পাশবিক নির্যাতন চালায়। আমি তাদের হাতে-পায়ে ধরেছি কিন্তু কেউ ছেড়ে দেয়নি। আমার ওপর যা হয়েছে তাই শেষ নয়। ঘর থেকে বের করে দিয়ে চোখের সামনে আমার বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। দাউ দাউ করে যখন আগুন জ্বলছিল, সেই আগুনে আমার অবুঝ দুই সন্তানকে নিক্ষেপ করে হত্যা করে। ১০ বছরের আয়াত উল্লাহ ও ৭ বছরের ফরিদ উল্লাহর মৃত্যু নিশ্চিত করা পর্যন্ত তারা জ্বলন্ত বাড়ি ঘিরে রাখে। আমি পরে বেঁচে থাকা তিন সন্তান নিয়ে পালিয়ে আসি। ৫ বছরের তাসমিন আরা, ৪ বছরের নুর আরাফাত ও ২ বছরের খুরশিদাকে নিয়ে রাতের আঁধারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসে ওঠেন। তিনি আশ্রয় পেয়েছেন টেকনাফের লেদা আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। মাজুমা জানান, এখানে আসার পর তিনি ক্যাম্পের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি। এরপর জীবনে কি ঘটবে জানা নেই মাজুমার। কতদিন তিনি এদেশে আশ্রয় পাবেন তাও অনিশ্চিত। মাজুমার মতো এ রকম অসংখ্য নারীর জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। তাদের কেউ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছেন, কেউ আটকা পড়েছেন মিয়ানমারে। ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৩টি চৌকিতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। ওই হামলায় জড়িতদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের ওই গ্রামগুলোতে দফায় দফায় নারকীয় হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের হাত থেকে নারী-শিশু-বৃদ্ধ কেউই রেহাই পাচ্ছে না। এতে দিশেহারা হয়ে প্রাণভয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে নির্যাতিতরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন শুক্রবার টেকনাফে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কিছু সীমান্ত দিয়ে বিপদাপন্ন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে- এটি অস্বীকারের অবকাশ নেই। যেসব সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকছে তা শনাক্ত করে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যারা বাংলাদেশে ঢুকে গেছেন তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এদিকে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে অনুপ্রবেশকালে আটক ৪১ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার। শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ম্যাককিসিক বিবিসিকে বলেন, ৯ অক্টোবর ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষীরা মিলে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘবদ্ধভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে। তারা দাবি করছে রোহিঙ্গারাই ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। জন ম্যাককিসিক বিবিসিকে বলেন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী রাখাইন রাজ্যে মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে, শিশুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে, লুটপাট চালাচ্ছে, নদী পেরিয়ে তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। ৯ নভেম্বরের পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত নির্যাতন সইতে না পেরে কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান বিজিবির কাছে নেই। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এ সময়ে অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। এরা কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন লোকালয়ে গোপনে আশ্রয় নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। টেকনাফের লেদা আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হিসাব বলছে, এখানেই প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এর বাইরে ওই ক্যাম্পে আগে থেকেই আশ্রয় নিয়ে আছেন আরও বিশ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা। এদিকে রোহিঙ্গারা সাম্প্রতিক সময়ে কোন পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন এবং কি ধরনের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কথা বলে তাদের মুখ থেকেই জানা গেছে অনেক ভয়ংকর সব তথ্য। রাখাইন রাজ্যের মংডু নাইনচং গ্রামের জমির হোসেনের স্ত্রী নুর বেগম স্বামী হারিয়ে শুক্রবার সকালে বৃদ্ধা মা ও দুই সন্তান নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কি ধরনের নির্যাতনের মুখে পড়েছেন এবং তার চেনাজানা লোকজন কিভাবে আক্রান্ত হয়েছেন সে বর্ণনাও দেন নূর বেগম। তিনি বলেন, সেনারা তার স্বামীকে ৬-৭ দিন আগে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। যারা নির্যাতন চালিয়েছে তারা সবাই সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী ছিল। নুর বেগম সে দেশে তার আত্মীয়-স্বজনরা কি ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন সে তথ্য দেন। তিনি বলেন, তার মামাতো ভাই সেলিম, খাইরুল বাশার ও নুরুল বাশারের স্ত্রীদের ধর্ষণ করা হয়েছে। এর আগে তার মামাতো ভাইদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ধর্ষিতা তিন ভাবী কোথায় আছেন কেমন আছেন জানেন না নুর বেগম। নির্যাতনের সেই বিভীষিকার কথা স্মরণ করে ভয়ে আঁতকে উঠেন তিনি। দুই সন্তান ৭ বছরের সাদেক, ৩ বছরের রোখসানা ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তিনি আর মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান না। লেদা আনরেজিস্টার্ড ক্যাম্পের একটি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন তিন পরিবারের ২০ সদস্য। তারা সেখানে এক ধরনের আত্মগোপনে আছেন। কারণ তারা যে এখানে অবস্থান করছেন সেটা জানাজানি হলে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হতে পারে এ ভয়ে তারা অস্থির। ক্যাম্পের ওই বদ্ধঘরে আশ্রয়গ্রহণকারীদের একজন হাফেজ মোহাম্মদ শাকের। যুগান্তরের কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি ২১ নভেম্বর দালালদের ম্যানেজ করে পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যদের নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেন। শাকের জানান, তার বাবা মোহাম্মদ হাশিমকে গুম করে নিয়ে গেছে। তার মা নুরুন্নাহারকে জবাই করা হয়েছে। মিয়ানমারের মংডু থানার জাম্বনিয়া গ্রামে ছিল শাকেরদের বাড়ি। তার ৩ বোন, ৯ ভাই। এর মধ্যে বিয়ের উপযুক্ত দুই বোন মল্লিকা ও সাবেকুন্নাহারকে ধরে নিয়ে গেছে সেনা পোশাকের অস্ত্রধারীরা। শাকের বলেন, তার দুই বোন এবং বাবার জীবনে কি ঘটেছে তা জানি না। দুষ্কৃতকারীরা গ্রামে ঢুকেছে এ কথা বলে হামলা চালায় সেনারা। তাদের সঙ্গে স্থানীয় রাখাইনরাও যোগ দেয়। শাকের আরও জানান, তাদের গ্রামের আশপাশের ৩৩০টি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ১৪ জনকে একসঙ্গে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে শাকের বলেন, এ তালিকায় আমার ৪ চাচা নুর ইসলাম, সাইফুল্লাহ, মো. ইসমাঈল ও অলি আহমেদ ছিলেন। এর আগে অলি আহমেদের ছেলে ২৫ বছরের যুবক আনিছ উল্লাহকে আরএসও সন্দেহে বাড়ির উঠানে সবার সামনে জবাই করে হত্যা করা হয়। এমনকি ঘরে তালা মেরে বেশ কিছু গ্রামবাসীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলেও জানান শাকের। এভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলে রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলোতে কি ধরনের তাণ্ডব চলছে তার ধারণা পাওয়া গেছে। মংডুর জাম্বনিয়া গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে ইয়াছমিন তারা জানান, সেনারা তার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে, নয় ভাই-বোনের মধ্যে ৩ ভাই ও ২ বোন কোনোমতে পালিয়ে আসি। বাকিদের জীবনে কি ঘটেছে জানিনা। তিনি সেখানে তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, তার বাসার পাশে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই মেয়ের নাম রাবেয়া। ইউনিফর্ম পরা লোকজন রাবেয়াকে ধর্ষণ করে। আমার উপযুক্ত বোন ধর্ষণের শিকার হতে পারে আশংকায় তাকে নিয়ে পালিয়ে আসি। বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গাকে নিয়ে আশংকাও রয়েছে অনেকের মাঝে। কেননা ইতিপূর্বে সীমান্তবর্তী এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে এরা জড়িত রয়েছে। তাদের সঙ্গে নতুন যারা যুক্ত হচ্ছে তারা যদি এভাবে লোকালয়ে মিশে যায় সেটা হবে আরও বেশি আশংকাজনক। টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, যারা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে এ ঘটনা অমানবিক। অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে তাদের নিয়ে মিয়ানমারের সরকারকেই ভাবতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে তাদের। উখিয়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি সরোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, মনে হচ্ছে চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে মুসলিম রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে আসছে। তাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করতে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এদিকে যেসব দালালের মাধ্যমে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ঢুকছে ওই দালালদের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ভুক্তভোগীরা একদিকে সর্বস্ব হারিয়ে দেশ ছাড়ছেন অন্যদিকে তাদের অসহায়ত্ব পুঁজি করে দালালরা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। তাদের ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের যুগান্তরকে জানান, সম্প্রতি আটক হওয়া কয়েকজন দালালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার খবর পেয়ে বাকিরা আত্মগোপন করেছে। এদের বিষয়ে প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.