তাজরিন ট্র্যাজেডিতে এতিম দুই শিশু
দুই শিশুসন্তান সীমা ও জাকারিয়াকে নিয়ে ভালোই চলছিল শাহীন (৩৫) ও জান্নাতি (৩০) দম্পতির দিনকাল। কিন্তু সবকিছু ওলটপালট করে দিল চার বছর আগে তাজরিন ফ্যাশন্সের অগ্নিকাণ্ড। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১১ পোশাক শ্রমিক। এ তালিকায় আছেন শাহীন-জান্নাতির নামও। যদিও তাদের লাশ আজও পাননি স্বজনরা। পাল্টে গেল শিশু সীমা ও জাকারিয়ার জীবন। এতিম দুই শিশুর আশ্রয় হল নানার বাড়ি। পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল। কীভাবে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না নানা শাহজাহান ও নানি হাবিবা বেগম। দিশেহারা হয়ে পড়লেন তারা।
এ সময় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর নজরে এলো সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। শিশু দুটির খোঁজ নিতে তিনি নিজেই গেলেন। পরম মমতায় তাদের বুকে তুলে নিলেন। পরিচিতি দিলেন নিজের নাতি-নাতনি হিসেবে। সাবেক প্রেসিডেন্টের ছোঁয়ায় পাল্টে গেল শিশু সীমা ও জাকারিয়ার জীবন। পেল থাকার জায়গা, শুরু হল পড়াশোনা। শুরু হল স্বপ্নের বীজ বোনা। সবাই তাদের ডাকে এরশাদের নাতি-নাতনি হিসেবে।
স্থানীয় একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সীমা বেগম। তার ছোট ভাই জাকারিয়া হোসেন পড়ছে তৃতীয় শ্রেণীতে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে লতিবপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে তাদের বাড়ি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ সেখানে তৈরি করে দেন বারান্দাসহ চার কক্ষের একটি পাকা বাড়ি। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বাড়িতে রয়েছে বিদ্যুৎ-টেলিভিশন। শিশু সীমা জানায়, এরশাদ দাদু সব সময় আমাদের খোঁজ নেন। আমাদের আদর করেন। সীমা বড় হয়ে স্কুলশিক্ষক হতে চায়। সে চায় তার ছোট ভাই জাকারিয়া হবে ডাক্তার। দুই ভাইবোনের স্বপ্ন এখন, স্বপ্নপূরণে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
নানি হাবিবা বেগম বলেন, ‘হামার প্রেসিডেন্ট এরশাদ এতিম ছাওয়া দুটার দুঃখের কথা শুনি এতে ছুটি আসছিল। তায় ছাওয়া দুটাকে আদর করি বুকে টানি নিল। তায় দেখিয়া মোর চোখ দিয়া দুঃখের পানি আসিল।’ (আমাদের প্রেসিডেন্ট এরশাদ এতিম বাচ্চা দুটিকে দেখতে ছুটে আসেন। তিনি বাচ্চা দুটিকে আদর করে বুকে টেনে নেন। দেখে আমার দুই চোখ পানিতে ভরে ওঠে।)
তাদের লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছেন এরশাদ। প্রতি ঈদে তাদের জন্য নতুন জামাকাপড়সহ নানা উপহার নিয়ে যান তাদের বাড়িতে। রংপুরে এলে তিনি সুযোগ পেলেই দুই এতিম শিশুকে দেখার জন্য যান। নানা শাহজাহান বলেন, এতিম দুই শিশুকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কী করব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সব পাল্টে গেল এরশাদ দায়িত্ব নেয়ার পর।
এলাকাবাসী জানায়, সীমা ও জাকারিয়ার জন্য সবাই আলাদা দৃষ্টিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। মা-বাবা হারানো দুই শিশুকে বেশ ভালোবাসে গ্রামের লোকজন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন-অর-রশীদ বলেন, শুধু এ পরিবারই নয়, সরকার ও দাতারা মিঠাপুকুরে নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও স্বজনদের নানা সহায়তা করেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.