সত্তরের দশকের শুরু থেকে আজ অবধি ৭ বছর বাদে বাকিটা সময় সোস্যাল ডেমোক্রেটরা শাসন করে আসছে অস্ট্রিয়া। কিন্তু সবসময়ই তাদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছে উগ্র ডানপন্থি রাজনীতি। ফ্রিডম পার্টি অব অস্ট্রিয়া (এফপিও) ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কিছু সাবেক নাৎসি কর্মকর্তার হাতে। ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রতিটি পার্লামেন্টারি নির্বাচনে শতাংশের হিসাবে দুই অংকের ঘরে ছিল দলটির সমর্থন। ২০০০ সালে মধ্য-ডানপন্থি ওভিপি দলের সঙ্গে জোট গঠন করে সরকারে যায়। আর আজ হয়তো দলটির প্রার্থী হয়ে যেতে পারেন দেশের প্রেসিডেন্ট। এক নিবন্ধে এসব লিখেছে লন্ডনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট। এতে বলা হয়, এফপিও’র প্রার্থী নর্বার্ট হফার মে মাসে গ্রিন পার্টি সমর্থিত আলেক্সান্ডার ভ্যান দার বেলেনের কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগে কিছু ভোট আদালত বাতিল করায়, এখন আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ডানপন্থি ও উদারপন্থিদের এমন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশটিতে নতুন নয়। তাহলে এবারই কেন এই নির্বাচন অস্ট্রিয়া, ইউরোপ ও বৃহত্তর বিশ্বের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে? অস্ট্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট পদটি অনেকটাই অলঙ্কারস্বরূপ। কিন্তু এই পদ একেবারে নখদন্ত্যহীন বাঘ নয়। প্রেসিডেন্ট সরকার ভেঙে দিতে পারেন। সরকারের মন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করতে পারেন। এছাড়া দেশের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিও তিনি। যেমন ধরা যাক, ইইউতে তিনিই দেশের প্রতিনিধি। এফপিও দলের জন্য তাই এ নির্বাচন তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে আরও বড় কিছুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করতে পারবে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নর্বার্ট হফারকে ভাবা হয় দলের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান হেইঞ্জ-ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাচের পুতুল। তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে এমনটাও ভাবা হচ্ছে যে, ক্ষমতাসীন বাম-ডান জোট সরকার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর না হলে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন দেবেন। আর বর্তমান জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসবে এফপিও-ওভিপি জোট সরকার। আর সরকার প্রধান তথা চ্যান্সেলর হবেন মি. স্ট্রাচে। ঘরে প্রভাব যা-ই হোক। হফার যদি জিতে যান, তাহলে ইউরোপের মূলধারার রাজনীতিও হোঁচট খাবে। কারণ, এটি হবে এ মহাদেশের জন্য এক তিক্ত মাইলস্টোন। কারণ, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোন দেশে এই প্রথম কোন উগ্র-ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। পাশাপাশি তিনি মাথাব্যথার কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারেন। অতীতে, জাতীয়তাবাদী চরমপন্থিদের সঙ্গে দহরম-মহরম থাকায়, অস্ট্রিয়াকে একঘরে করেছিল দেশটির প্রতিবেশীরা। ১৯৮৬ সালে কার্ট ওয়াল্ডহেইম অস্ট্রিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন তার যুদ্ধকালীন একটি সেনা ইউনিট যুদ্ধাপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে। ২০০০ সালে উগ্র ডানপন্থিরা জোট সরকার গঠন করে অস্ট্রিয়ায়। তখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কিছু সদস্য রাষ্ট্র অস্ট্রিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু এখন কর্তৃত্ববাদী পপুলিস্টরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হালে পানি পাচ্ছে। যেমন, হাঙ্গেরিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ভিক্টর ওরবান। তাই এবার অস্ট্রিয়াকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন করাটা কঠিন হবে। এই নির্বাচনের বৈশ্বিক তাৎপর্যও আছে। মি. হফার হয়তো একটি পুরোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও স্টাইল একেবারে নতুন এবং এখনকার একটি বিশেষ ধাঁচের। অনেকটা আমেরিকার ডনাল্ড ট্রামপ, নেদারল্যান্ডের পার্টি ফর ফ্রিডম ও ফ্রান্সের ম্যারিন ল্য পেনের মতো। তার মুখের ভাষাও তাদের মতো। খুবই বর্ণবাদী, অভিবাসন-বিরোধী ও অর্থনৈতিক পুনঃবণ্টন, রাজনৈতিক-ব্যবস্থার প্রতি বিদ্রোহসূচক ভাষা ও স্টাইল তাদের। একই দিনে ইতালিতে হবে নির্বাচন। কয়েকদিন পর ফ্রান্সে। এ নির্বাচনে হফার জিতলে, শক্তিশালী হবে ওইসব দেশের নব্য পপুলিস্টরাও।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.