২২১ রানে হাতে ৫ উইকেট নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের লিড টপকাতে প্রয়োজন মাত্র ৭২ রান। কিন্তু হলো না। মাত্র ১২ ওভার খেলে ২৭ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডকে ৪৫ রানের লিড উপহার দিলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। উপহার না বলে উপায় কি! দিনের দ্বিতীয় বলেই অফ স্পিনার মঈন আলীর বলকে কেন বেরিয়ে এসে তেড়েফুড়ে মারতে চাইবেন সাকিব আল হাসান। বলের লাইনে তার ব্যাটও ছিল না। তাইতো বেয়ারস্টোর সহজ স্টাম্পিংয়ের শিকার হতে সময় লাগেনি। দ্বিতীয় দিন বিকালে আফসোসের নাম ৪৮ রানে আউট হওয়া অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। তৃতীয় দিন সকালে সেই আফসোসকে বিষাদে পরিণত করেন সাকিব। অথচ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল দেশ। এরপর টপাটপ বাকিরাও সাজঘরে। ২৪৮ রানে গুটিয়ে গেলো দল। অবশ্য সাকিব যেন সেই অনুশোচনা থেকে বল হাতে দুর্বার। আগের ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়া মিরাজ গতকালও ২৬ রানে ইংলিশ ওপেনিং জুটিকে ধাক্কা দিলেন কুককে ফিরিয়ে। এরপর সাকিবের দুই ওভারে মাত্র ৩ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট নেই ইংল্যান্ডের। আগের ইনিংসে ৬৮ করা মঈনও সাকিবের শিকার। ৬২ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা ইংল্যান্ডকে অবশ্য আলোর পথ দেখালেন বেন স্টোকস। বল হাতে ৪ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে ৮৫ রান করলেন। ক্যারিয়ারে ৭ম ফিফটি হাঁকানো স্টোকসকে সাকিব ফেরালেও দুশ্চিন্তাও সঙ্গে নিয়ে গেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর বোর্ডে ২২৮ রান ৮ উইকেট হারিয়ে। অবশ্য এরই মধ্যে লিড ২৭৩ রানের। আজ শেষ দুই উইকেটে লিডটা আরো কত বড় চ্যালেঞ্জ হয় সেটাই দেখার বিষয়! চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কত রানে থামবে ইংলিশরা তা আজকের সকালই বলে দিবে। কিন্তু সুযোগ হাতছাড়া করা টাইগাররা যে কঠিন চ্যালেঞ্জর মুখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উইকেটের যে কন্ডিশন তাতে ২০০ করাও কঠিন অসাধারণ ব্যাটিং না হলে। আর টাইগারদের চতুর্থ ইনিংসে জয়ের রেকর্ডটাও মজবুত নয়। এই পর্যন্ত ৯৪ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের সংখ্যা মাত্র ৭টি। এর চতুর্থ ইনিংসে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রান ও দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালে ১০১ রান তাড়া করে জয় এসেছিল। এর মধ্যে ক্যারিবীয়দের ২১৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে হারিয়েছিল ৬ উইকেট। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় এসেছিল মাত্র ৩ উইকেটে। গতকাল সাকিব আল হাসানের বাজে ব্যাটিংয়ে শুরু হয়েছিল হতাশার তৃতীয় দিন। লিড নিয়ে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুক মাঠে নেমেছিলেন ফুরফুরে মেজাজেই। সঙ্গী তরুণ বেন ডাকেট। আগের দিনে ১৭ রানেই থেকে ২১ রানের মধ্যে ইংল্যান্ড ৩ উইকেট হারিয়েছিল। কিন্তু গতকাল ওপেনিংয়ে ২৬ রানের জুটি গড়ে তুলে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। প্রথম ইনিংসে পেসার শফিউল ইসলাম ও অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজ বল হাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু মিরাজ জাদুর পর অধিনায়ক প্রথম ওভারে বল তুলে দিলেন এই তরুণের ওপর। প্রথম ওভারেই বেন ডাকেট তার বলে আউট হওয়ার সম্ভাবনা জাগে। মিরাজের বল ব্যাট ছুঁয়ে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়েছে কিনা তা দেখতে রিভিউ চাওয়া হয়। কিন্তু সফল হয়নি। নিজের পঞ্চম ওভারে ফের চমক। আগের ইনিংসে ৬ উইকেটের মধ্যে কুকের নামটি ছিল না। গতকাল ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা এই ওপেনার ব্যাটসম্যানকেও অভিষেক টেস্টে আউট করলেন মিরাজ। অবশ্য স্লিপে দারুণ ক্যাচটির জন্য মাহমুদুল্লাহকে ধন্যবাদ দিবেন মিরাজ। এরপর সাকিবের ভুল শোধরানোর পালা। স্পিনে দক্ষ জো রুট সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর শিকার। সেই সঙ্গে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তার ১৫০তম উইকেটে মাইল ফলকও ছুঁয়ে ফেলেন। এরপর তিনি ছাড়িয়ে যেতে থাকেন নিজেকে। পরের ওভারেই সাকিব ফেরান বেন ডাকেটকে। লাঞ্চ বিরতিতে যায় তারা ২৮ রান ৩ উইকেট হারিয়ে। সেখান থেকে ফিরেও নিস্তার নেই। তাইজুল বল হতে পেয়ে প্রথম ওভারেই ব্যালান্সকে ফিরালেন। এর পর প্রথম ইনিংসে দল বাঁচানো মঈন আলীকে ফেরান সাকিব। ৫ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের লিড তখন ১০০ রান। তাই স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টোর ব্যাটে স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেলো। দুজন দারুণ জুটিতে প্রতিকূল উইকেট-কন্ডিশনে অসাধারণ ব্যাট করেন। এই টেস্টে প্রথম শতরানের জুটি উপহার দেন তারা। ম্যাচটা যখন ধীরে ধীরে তারা নিজেদের করে নিচ্ছিলেন ঠিক তখন টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম উইকেট এনে নিয়ে স্বস্তি ফেরালেন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। অবশ্য আউট হওয়ার আগে বেয়ারস্টো উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে এক বছরে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডে গড়ে ছাড়িয়ে গেলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে। এন্ডি করেছিলেন ১ হাজার ৪৫ রান আর বেয়ারস্টো করলেন ১ হাজার ৯১ রান। এরপর আদিল রশিদকে ফিরিয়ে সাকিব পূর্ণ করলেন টেস্ট ক্রিকেটে তার পঞ্চদশ ৫ উইকেট। অবশ্য ওকস আর স্টুয়ার্ট ব্রড কাটিয়ে দেন দিনের বাকিটা সময়। অন্যদিকে বাংলাদেশের সম্ভাবনার অপমৃত্যু দিনের দ্বিতীয় বলেই। যার দিকে তাকিয়ে ছিল দল, সেই সাকিব আল হাসান আউট হলেন পাগলাটে এক শটে। ৩১ রানে সাকিব আউট হওয়ার পর ভরসা ছিলেন শুধু অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু মিরাজ ১ ও সাব্বির ১৯ রান করেই তাদের টেস্ট ক্যারিয়ারের রানের খাতা খুলে বিদায় নিলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.