‘সুন্দরবনের কাছে, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গোদাড়া গ্রামে আমার বাড়ি। ছোটবেলায় একবার প্রচণ্ড দাঁত ব্যথা হয়েছিল। কিন্তু বর্ষার মেঠো রাস্তায় যে পরিমাণ কাদা, দাঁত ব্যথার চেয়ে সেই কাদা ডিঙিয়ে উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়া ছিল আরও কষ্টকর!’ বলছিলেন ফারহানা শারমিন। সেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে নানা বাধা পেরিয়ে তিনি ঠিকই ঠাঁই করে নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ছেন ইংরেজি বিভাগে। শুধু তা-ই নয়, স্নাতকে নিজ ব্যাচের সর্বোচ্চ সিজিপিএ ছিল তাঁর দখলে। এখন স্নাতকোত্তরেও ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন ফারহানা শারমিন। কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল আ. প্র. চ. মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের ছাত্রী ছিলেন। ছোটবেলায় পড়ার বই-খাতার সঙ্গে হারমোনিয়ামও ছিল তাঁর সঙ্গী। ভাই তবলা ধরতেন, আর বাবা কোলে বসিয়ে হারমোনিয়ামে গান শেখাতেন। শেষে মেয়ের উৎসাহ দেখে বাবা গানের মাস্টার রেখে দেন। গানের শিক্ষক ছিলেন পবিত্র ঘোষ। শারমিন বলছিলেন, ‘স্যার রোজ ৩ মাইল পথ সাইকেলে চেপে গান শেখাতে আসতেন। তাঁর কাছেই রবীন্দ্রসংগীত, উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছি।’ স্কুল থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০০২ সালে রবীন্দ্রসংগীতে ও ২০০৩ সালে বিতর্কে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বিতর্ক অনুষ্ঠানগুলো দেখে দেখেই শিখেছিলেন বিতর্কের কলাকৌশল। প্রতিবছর স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে স্বর্ণপদক দেওয়া হতো। সেখানে ‘সর্বগুণে গুণান্বিত’ ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন স্কুলের মেয়েদের মধ্যে এসএসসিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শারমিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মনোযোগের পুরোটা ঢেলে দিয়েছেন পড়ালেখায়। তবে এর ফাঁকেও ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখ, পূজা, বিজয় দিবস—যেকোনো অনুষ্ঠানে সুযোগ পেলেই মঞ্চে গান গেয়েছেন। শারমিনের লক্ষ্য শিক্ষক হওয়া। তিনি বলছিলেন, ‘আমার মা, বাবা, দাদা—সবাই শিক্ষক ছিলেন। পরিবার আর নিকটাত্মীয় মিলিয়ে প্রায় দশ জন শিক্ষকতা করেছেন। তাঁদের দেখেই আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’ আলাপের শেষে এসে আবারও বললেন তাঁর গ্রামের কথা। ফারহানা শারমিনের স্কুলের সহপাঠীদের খুব অল্পসংখ্যকই কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছেন। নানান সমস্যা, আর্থিক অসংগতি আর উপযুক্ত দিকনির্দেশনার অভাবে ঝরে পড়েছেন অনেকে। শারমিনের ইচ্ছে আছে, যাঁরা মেধা থাকা সত্ত্বেও সুযোগের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন না, ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য একটা কিছু করবেন। -সূত্র: ইন্টারনেট
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.