ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর সাংসদ পদে থাকার বৈধতা নিয়ে করা রিট আবেদনের ওপর বিভক্ত রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার বিভক্ত রায় হয়। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. এমদাদুল হক রায়ে রুল যথাযথ (রুল অ্যাবসলিউট) বলে নিজাম উদ্দিন হাজারীর সাংসদ পদে থাকা অবৈধ ঘোষণা করেন। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অপর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান রিট আবেদন (রুল ডিসচার্জ) খারিজ করে রায় দেন। আইনজীবীরা বলেন, নিয়ম অনুসারে এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি ভিন্ন বেঞ্চে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য পাঠাবেন। সেখানে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। গতকাল বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রায় ঘোষণা চলে। বিভিন্ন নথি, পক্ষগুলোর বক্তব্য ও নজির তুলে ধরে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. এমদাদুল হক রায়ে বলেন, আবেদনকারীর রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য। দাখিল করা নথি, দলিলাদি ও পক্ষগুলোর বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে এটা বলা যায়, ৭ নম্বর বিবাদী (নিজামী হাজারী) তাঁর নির্ধারিত সাজাভোগ শেষ করেননি। অনুমোদন ছাড়া অস্ত্র রাখায় তাঁর সাজা হয়েছিল। এটি নিঃসন্দেহে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। সংবিধান অনুসারে নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ড হয় এবং তাঁর মুক্তিলাভের পাঁচ বছর পার না হলে সাংসদ পদে প্রার্থিতার সুযোগ নেই। এ কারণে তিনি আইনত প্রার্থী হওয়ার যোগ্য ছিলেন না। সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুসারে তিনি পদে থাকতে পারেন না। তাঁর পদ অবৈধ ঘোষণা করা হলো। এরপর দ্বিমত পোষণ করে রায় ঘোষণা করেন দ্বৈত বেঞ্চের অপর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান। রায়ে বলা হয়, সংসদ সদস্য পদে প্রার্থিতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে সে বিষয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জানাতে হবে, ওখানেই এর নিষ্পত্তি হবে। নথিপত্র পর্যালোচনা করে বলা হয়, এই মামলায় বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু সাংঘর্ষিক ও বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে, যার কারণে প্রকৃত ঘটনা সুনিশ্চিতভাবে উদ্ঘাটন করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে তথ্যগত বিভ্রান্তি (ডিসপিউটেড ফ্যাক্টস) থাকলে রিট আবেদন চলে না। রুল খারিজ করা হলো। রায় ঘোষণাকালে আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, সত্য রঞ্জন মণ্ডল, রাশিদা চৌধুরী ও মোকাররামুছ সাকলান। নিজামী হাজারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শফিক আহমেদ, নুরুল ইসলাম ও মাহবুব শফিক। প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আফতাব উদ্দিন ছিদ্দিকী। ‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নিজাম হাজারী সাংসদ হন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ জুন হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ফেনী-২ আসনের সাংসদ হিসেবে নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ববলে পদে আছেন এবং ওই আসনটি কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.