বিষাক্ত পটকা মাছ খেয়ে সিলেটের জৈন্তাপুরে একই পরিবারের ৫ সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। পটকা মাছ খাওয়ার পর এক এক করে অসুস্থ হয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হন। এবং দুপুর থেকে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ৫জন মারা যান। জৈন্তাপুরের পল্লী জনপদ উত্তর মহাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে, গতকাল সন্ধ্যা থেকে জৈন্তাপুরের সব বাজারে বিষাক্ত পটকা মাছ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। কেউ যাতে পটকা মাছ বিক্রি করতে না পারে সেজন্য উপজেলার ৬ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও সোহেল মাহমুদ। মারা যাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন- উত্তর মহাইল গ্রামের মরহুম মুসি মিয়ার ছেলে বয়োবৃদ্ধ আব্দুর রহিম, তার ছেলে সোলেমান হোসেন (৪০) ও লোকমান হোসেন (২২) ও মারা যাওয়া সোলেমান হোসেনের দশ বছরের শিশুপুত্র রাহিন ও মনি। এছাড়া সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪র্থ তলার ১ ও ৩ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন বুরহান হোসেন, জয়নাল হোসেন, হুসনা বেগম, রাহিমা বেগম ও মারুফা বেগম। তাদের অবস্থা অপরিবর্তিত বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা। জৈন্তাপুরের দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মাইনুল হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, গত সোমবার বিকালে স্থানীয় দরবস্ত বাজার থেকে বিষাক্ত পটকা মাছ ক্রয় করেন পরিবারের বয়োবৃদ্ধ সদস্য আব্দুর রহিম। ওই বাজারে পটকা মাছ বিক্রি করা হচ্ছিল। রাতেই তাদের পরিবারে পটকা মাছ রান্না করা হয়। এবং পরিবারের সদস্য সোলেমান হোসেন পটকা মাছ খান। এদিকে, মধ্যরাতের দিকে সোলেমান হোসেনের শরীর হঠাৎ করে কাঁপতে শুরু করে। এবং শরীরের মধ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়। রাতে তাকে জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদিকে, সকালের দিকে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষাক্ত পটকা মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে অসুস্থ সোলেমানকে দেখতে হাসপাতালের পথে রওনা দেন। কিন্তু পথিমধ্যে তারা এক এক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাদেরও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকরা তাদের পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ওসমানী হাসপাতালের ৪র্থ তলার ১ ও ৩নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করার পরপরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সোলেমান হোসেন। পরে এক ঘণ্টার ব্যবধানে এক এক করে মারা যান আব্দুর রহিম, লোকমান, রাহিন ও মনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিষাক্ত পটকা মাছ খেয়ে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তারা জানান, পটকা মাছ খাওয়ার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শরীরে কাঁপন শুরু হয়। এক সময় তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তবে যারা কম খেয়েছেন তাদের বিষক্রিয়াটা কম হয়েছে। তারা বলেন, অসুস্থদের সুচিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি জৈন্তাপুর থেকে হাসপাতালে আসেন। এসে দেখেন ৫ জন মারা গেছে। তবে, যারা অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে সন্ধ্যায় উত্তর মহাইল গ্রামে যান জৈন্তাপুর ইউএনও সোহেল মাহমুদসহ পুলিশ দল। ইউএনও সোহেল মাহমুদ মানবজমিনকে জানান, ৫ জনের মৃত্যুর খবর তার কাছে পৌঁছেছে। তিনি মহাইল গ্রামে গেছেন। সেখানের পরিবেশ তিনি দেখছেন। তবে, ঘটনার পরপরই তিনি উপজেলার ৬ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ফোন করেছেন। উপজেলার কোনো বাজারে যাতে বিষাক্ত পটকা মাছ বিক্রি করা না হয় সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান। এদিকে, ইউপি মেম্বার মাইনুল হোসেন জানিয়েছেন, ওসমানীতে চিকিৎসাধীন ৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইবনেসিনা হাসপাতালে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত মারা যাওয়া ৫ জনের মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছিল। ওই মরদেহগুলো ময়না তদন্ত হবে না রাতেই বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্বান্ত হয়নি বলে জানান মাইনুল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.