নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মোট ২০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে ১৭৫ জনের পেশা ব্যবসা, যা মোট প্রার্থীর ৮৭ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশি হলে তা সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজে অনেক ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। কারণ, ব্যবসায়ীরা সময় কম দেন। সবকিছুতেই ব্যবসায়িক চিন্তা করেন। নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারিত করেন। অনেক সময় ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যের ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করেন। ফলে সাধারণ মানুষ তাঁদের কাছ থেকে সেবাবঞ্চিত হন।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদের ১৫৬ জনের মধ্যে ১৪৪ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের ৩৮ জনের মধ্যে ২৬ জন লিখেছেন তাঁদের পেশা ব্যবসা। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী মনোনয়নপত্রে নিজের পেশা চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন। আর তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাখাওয়াত খান পেশা হিসেবে আইন ব্যবসায় উল্লেখ করেছেন।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতি ব্যবসায়িকীকরণ হয়ে গেছে। স্থানীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়েছে। নির্বাচন করতে টাকা লাগে, যা একজন ব্যবসায়ী, দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরা যে খরচ করেন, নির্বাচিত হলে সে খরচ উঠিয়ে নেওয়ার উপায় খোঁজেন।
এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জমি দখল, মাদক ব্যবসা, প্রতারণা ও বিদ্যুৎ চুরির মামলা রয়েছে। অন্তত ১০ জন আছেন জেলা পুলিশ ও র্যাবের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।
নারায়ণগঞ্জে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত নাগরিক সমাজের একজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী পরিচয়ে যাঁরা নির্বাচন করছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, পোশাক কারখানার ঝুট ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই জাতীয় ব্যক্তিরা নির্বাচিত হলে কী অবস্থা হবে তা বোঝা কষ্টসাধ্য কিছু নয়।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের মতে, স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষিত হওয়া দরকার। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জে বিগত নির্বাচনের পর দেখা গেছে ব্যবসায়িক কারণে সেখানে কাউন্সিলরদের মধ্যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে। এর পরিণামও মানুষ দেখেছে। কাউন্সিলর নূর হোসেনের কারণে আরেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম খুন হন। সাত খুনের মতো ঘটনা নারায়ণগঞ্জে ঘটেছে। সিটি করপোরেশনে নিজের পদ ব্যবহার করে ব্যবসার সুযোগ থাকলে একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে তা থেকে দূরে থাকা কঠিন। এসব কারণে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বেশির ভাগ পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী না হলে ভালো হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.