বাংলাদেশ থেকে নির্বাচন হারিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করার বিষয়টি মানুষ ভুলে যেতে বসেছে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এবং বিতর্ক হওয়া দরকার। আলোচনা থেকে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নির্বাচন কমিশন গঠন এবং শক্তিশালীকরণ: বিএনপির প্রস্তাবাবলি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, চট্টগ্রাম শাখা এই গোলটেবিলের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আইনজীবী কবির চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক সচিব আ ন হ আখতার হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম, ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার সদস্যসচিব খুরশিদ জামিল। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এতে বলা হয়, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাছাই কমিটি গঠন, নির্বাচনের সময় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থায় এখন আর নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটার কোনো সুযোগ নেই। শুধু একজন মানুষের চিন্তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনী বেসামরিক সরকারকে সহযোগিতা করে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সেতু নির্মাণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করছে। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে কেন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে না? জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। ভারতেও নির্বাচনের সময় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে জানান তিনি। বিএনপির দেওয়া ১৩ দফা প্রস্তাবের কিছু অংশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠন করা হবে সে সম্পর্কে আইন তৈরির সুযোগ দিয়েছে সংবিধান। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় কখনো সে আইন করেনি। আওয়ামী লীগও এই আইন করার বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। বিএনপির দেওয়া প্রস্তাবে কমিশন গঠন-সংক্রান্ত আইন পাস করার বিষয়ে সরকারকে কিছু বলা হয়নি। এখন সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। আইনটি পাস হলে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ বহাল থাকলে নির্বাচন কমিশন কখনো রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার।’ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ১৩ দফা প্রস্তাব নিয়ে জনমত সৃষ্টির কাজ করে যেতে হবে বলে জানান সাবেক সচিব আ ন হ আখতার হোসেন। রুহুল আমিন গাজী বলেন, ১৩ দফা প্রস্তাবের মধ্যে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের কথা। এই প্রস্তাবের কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচন দিবারাত্রির ক্রিকেট খেলার মতো হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আজ বাইরে কথা বলার অধিকার নেই। ঘরের ভেতরে কথা বলতে হয়। এখন দিনে ও রাতেও ভোট হয়। এ রকম নির্বাচন কমিশন কেউ চায় না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.