বাংলাদেশ বড় শিকার ধরতে শিখেছে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগেই। কিন্তু সেই সাফল্য এতটাই অনিয়মিতভাবে এসেছে যে পরাশক্তিদের বিপক্ষে হঠাৎ পাওয়া জয়কে অনেকে ‘অঘটন’ বলতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু বাংলাদেশ যে বড় দলকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে পারে, সেটি দেখানোর শুরু তো নিউজিল্যান্ডকে দিয়েই। স্মৃতিতে নিশ্চয়ই ফিরে আসবে ২০১০ সালের অক্টোবরের ওয়ানডে সিরিজটা। দেশের মাটিতে ৪-০ ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই থেকে ক্রিকেটের অভিধানে ঢুকে গেছে ‘বাংলাওয়াশ’ নামের একটি শব্দও। তিন বছর পর আবারও বাংলাদেশের কাছে ধবলধোলাই হয়েছে কিউইরা। টেস্টে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করার প্রথম শৌর্য বাংলাদেশ দেখিয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। কিন্তু কিউইদের সঙ্গে বাংলাদেশের যত বিক্রম দেশের মাটিতেই—৬ টেস্টের তিনটিতে ড্র, ১৩ ওয়ানডের ৮টিতে জয়। অবশ্য একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে হেরেছেন মাশরাফিরা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বড় বিবর্ণ, নিরন্তর সংগ্রামের। পাঁচ টেস্টের সবগুলোই হেরেছে বাংলাদেশ। তিনটি ইনিংস ব্যবধানে, একটি ৯ উইকেটে, আরেকটি ১২১ রানে। সাত ওয়ানডের প্রতিটিতে হার। একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেও তাই। সর্বশেষ ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সফরের সব ম্যাচ হেরে এসেছেন সাকিব-তামিমরা। কোনো সংস্করণেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার কি ব্যর্থতার চক্র ভাঙতে পারবে বাংলাদেশ? কাজটা যে ভীষণ কঠিন কাল সফর-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বললেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, ‘নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের হারানো অনেক কঠিন। অনেক বড় বড় দলও পারে না। তবে আমরা বলছি না আমরাও পারব না। ভালো খেলতে পারলে সেটা সম্ভব। কিন্তু কাজটা অনেক কঠিন।’ কঠিন, কিন্তু অসম্ভব তো নয়। তা ছাড়া ২০১০ সালের দলটার সঙ্গে আজকের বাংলাদেশকে মেলানো ঠিক হবে না। গত দুই বছরে সাতটি ওয়ানডে সিরিজের ছয়টিই জিতেছে বাংলাদেশ। নিজেদের চেনা পরিবেশে দুর্দান্ত মাশরাফিদের সামনে এবার কঠিন চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন পর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ তাঁরা খেলতে যাচ্ছেন বিদেশে। তবে নিউজিল্যান্ডেও সাফল্যের অনুবাদ হবে, এমনটাই আশা বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের, ‘দেড়-দুই বছর আগে আমরা লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম, দেশে অন্তত ৮০ শতাংশ ম্যাচ জিতব। আল্লাহর রহমতে আমরা তাতে সফল হয়েছি। এখন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ, দেশের বাইরে খেলা। বড় দলগুলোর জন্যই এটা কঠিন, আমাদের জন্য সেটা আরও বেশি। নিউজিল্যান্ডের আবহাওয়া একটু অন্য রকম। তবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যেভাবে দেশের মাটিতে খেলেছি, ভালো খেলার স্মৃতিগুলো যদি মনে করে ওখানেও খেলতে পারি, আশা করি ভালো কিছু হবে।’ নিউজিল্যান্ড সফরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে পরশু। প্রস্তুতি ক্যাম্পের জন্য বাংলাদেশ দলের একাংশ কাল পৌঁছে গেছে সিডনিতে। বাকিরা যাবেন আজ রাতে। এই দলে হঠাৎ করেই যোগ হয়েছেন ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে বিপিএল খেলা মেহেদী মারুফ। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন, ঘোষিত ২২ জনের দলে নতুন কাউকে নেওয়া হবে না। মেহেদীর অন্তর্ভুক্তি তাই রহস্যজনক। তবে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান জানিয়েছেন, মেহেদীকে পাঠানো হচ্ছে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায়। সফরের আগ মুহূর্তে বিপিএলে দারুণ খেলা দুই পেসার মোহাম্মদ শহীদ ও শফিউল ইসলাম ছিটকে গেলেও বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করছে দলের গুরুত্বপূর্ণ বোলার মোস্তাফিজুর রহমান ফেরায়। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তিন ওয়ানডের চ্যাপেল-হ্যাডলি সিরিজে নিউজিল্যান্ডের হোয়াইটওয়াশ হওয়াটাও কি মাশরাফিদের অনুপ্রাণিত করছে না? বাংলাদেশ অধিনায়ক তা মনে করেন না, ‘না, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ফলের হিসাব আমাদের সঙ্গে করে লাভ নেই। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের নাম্বার ওয়ান দল। তাদের কাছে নিউজিল্যান্ড হারছে আর আমরা সেই দলের সঙ্গে খেলতে যাচ্ছি, কিছুতেই মেলানো যাবে না।’ এটা না মিললেও মাঠের হিসাবটা নিশ্চয়ই ঠিকঠাক মেলাতে চাইবেন মাশরাফিরা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.