আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে পুরোনো ইতিহাস ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন আবিষ্কারকে গ্রহণ করছে মানুষ। তারপরেও এমন কিছু প্রাচীন আদিবাসী গোষ্ঠী আছে যারা পুরোনো ঐতিহ্য ভুলতে পারে না। বারবার ফিরে যেতে চায় সেখানে। এমনই এক গোষ্ঠী ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া নিউগিনির দানি আদিবাসী। তাদের পৃথিবীর প্রাচীন কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠীর একটি বলে মনে করা হয়। পাপুয়া নিউগিনিতে আরও কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠী আছে। কিন্তু দানি আদিবাসী গোষ্ঠীর সামাজিক রীতিনীতি একেবারেই আলাদা।
তারা নিজেদের হাজার বছরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে চান। এ লক্ষ্যে প্রতি বছর আগস্ট মাসের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরোনো রীতিনীতিকে স্মরণ করে। প্রতিবছরের মত এবারও অনেক বড় উৎসবের আয়োজন করেছে গোষ্ঠীটি।
অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলো প্রতীকী যুদ্ধের আয়োজন। লানি ও আলি নামের দুটি গ্রুপ আয়োজন করে যুদ্ধটি। ছবিতে যুদ্ধের সাজে এক গ্রুপ।
এবারের আয়োজনে আদিবাসী গোষ্ঠীটি সেজেছে তাদের পুরোনো ঐতিহ্যে। পুরুষরা সারা শরীর নগ্ন ও সাদা মাটি দিয়ে লেপে রঙ করেছে, কপালে পাখির পালক, কোমরে সামান্য কোমর বন্ধনী, গলায় তাদের ঐতিহ্যবাহী মালা, হাতে তীর বা ধারালো অস্ত্র আর যৌনাঙ্গ ঢাকার জন্য ঐতিহ্যবাহী খোলস পরে হাজির হয়েছে অনুষ্ঠানে। আর নারীরা সারা শরীর খোলা রেখে কোমরে স্কার্ট ও মাথায় সাদা বেনী পরেছে।
তারা মনে করে এই প্রতীকী যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের কল্যাণ হবে ও তাদের ঐতিহ্য রক্ষা হবে।
পুরোনো ঐতিহ্যকে স্মরণ করতে উৎসবে বিভিন্ন কার্যক্রমের আয়োজন করেছে তারা। কেউ বাঁশি বাজিয়েছে, কেউ তীর নিক্ষেপ করেছে আবার কেউ নাচগান করে মাতিয়েছে পুরো অনুষ্ঠানকে। তবে অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল প্রতীকী যুদ্ধের আয়োজন। সেখানকার দুটি জনপ্রিয় গোষ্ঠী লানি আর আলি। তারা প্রতি বছর প্রতীকী যুদ্ধের আয়োজন করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দুই দল ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে অংশ নিয়েছে যুদ্ধে। যুদ্ধের সঙ্গে বাজানো হয়েছে ঐতিহ্যবাসী সংগীত। দুই মিলিয়ে হাজার বছরের পুরোনো আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আদিবাসী গোষ্ঠীটি তাদের ঐতিহ্যবাহী সাজে সেজেছে। হাতে তীর ধনুক, গলায় মালা ও মাথায় পাগড়ি সব মিলিয়ে একেবারে পুরোদস্তু প্রাচীন জনগোষ্ঠী।
প্রতীকী যুদ্ধের পর শুরু হয় তাদের ঐতিহ্যবাহী সংগীত আয়োজন, তীর নিক্ষেপ, শূকর দৌড় ও মাটিতে চুলা তৈরি করে শূকর পুড়িয়ে খাওয়ার আয়োজন। এভাবে সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন পুরোনো ঐতিহ্যকে স্মরণ করে তারা। একটি জাতি গোষ্ঠীর পুরোনো ঐতিহ্যকে কখনো ভুলা হইতো সম্ভব নয়, সেটি বারবার প্রমাণ করেছে এই দানি জনগোষ্ঠীটি।
পশুশিকারেরও আয়োজন করে তারা। ছবিতে একটি গ্রুপ পশু শিকারে অংশ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হলো লানি ও আলি গোষ্ঠীর প্রতীকী যুদ্ধের আয়োজন। যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের শক্তি ও সাহসকে তুলে ধরে তারা।
নারীরা সারা শরীর খোলা রেখে কোমরে স্কার্ট ও মাথায় সাদা বেনী পরে হাজির হয় অনুষ্ঠানে।
দুজন দানি আদিবাসী খড়ে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে হাজারও কার্যক্রমের মাধ্যমে পালন করা হয় অনুষ্ঠানটি।
ঐতিহ্যবাহী সাজে সেজেছেন এক দানি আদিবাসী নারী। সারা শরীর খোলা রেখে কোমরে স্কার্ট ও মাথায় বেনী পরে তারা।
একজন ইন্দোনেশিয়ান সৈনিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
পিকোন নামের এক ধরনের বাঁশি বাজাতে অভ্যস্থ তারা। এই বাঁশিগুলো যুদ্ধাদের চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। ছবিতে এক দানি আদিবাসী পিকোন বাজাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে নাচ গানের আয়োজন করা হয়। প্রায় দুই দিন ধরে চলে নাচ গানের আয়োজনটি। ছবিতে নাচ ও গানের জন্য সেজেছে দুই আদিবাসী।
বহুরুপী সাজে নাচের অনুষ্ঠানে দানি আদিবাসী গোষ্ঠী।
এ বছর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় ৮ থেকে ১০ আগষ্টের মধ্যে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন প্রায় ৩০০ ডান্সার এবং প্রায় ২০০ দর্শনার্থী বিদেশি অনু্ষ্ঠান দেখতে আসে।
ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ভিন্ন সাজে দানি আদিবাসী গোষ্ঠী।
প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারা। এবার ২৭ তম অনুষ্ঠান শেষ হলো।
পৃথিবীর প্রাচীন আদিবাসীদের মধ্যে দানি আদিবাসী অন্যতম। হাজার বছর ধরে তারা তাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে।
হাতে তীর-ধনুক ও যৌনাঙ্গে খোলস দানি আদিবাসীর প্রধান বৈশিষ্ট। ছবিতে তীর নিক্ষেপরত এক দানি আদিবাসী।
নাচের সময়ও এই আদিবাসী গোষ্ঠী হাতে তীর-ধনুক ও বল্লম নিয়ে থাকে। এই অস্ত্রগুলো যেন তাদের ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লানি ও আলি গ্রুপের প্রতীকী যুদ্ধের ছবি এটি। তারা মনে করেন এই যুদ্ধ তাদের কল্যাণ ও শক্তির প্রতীক।
আধুনিক যুগে দানি আদিবাসীদের মধ্যেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তাদের তাগের পোষাক পরিচ্ছেদও পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
মাথায় ঐতিহ্যবাহী বেনী পরে একান্ত গোপনীয় আলোচনা করছেন দুই দানি আদিবাসী নারী।
এ বছর ২৭ তম ঐতিহ্যবাহী উৎসবে প্রায় ৩০০ জন নারী-পুরুষ অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। ছবিতে কয়েকজন ইন্দোনেশিয়ান পুলিশ অনুষ্ঠান পাহারা দিচ্ছেন।
পুরুষরা তাদের যৌনাঙ্গে এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী খোলস পরিধান করে।
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়েছেন কয়েকজন আদিবাসী নারী-পুরুষ।
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভীড় জমিয়েছে কয়েকজন দানি আদিবাসী।
নারীরা সারা শরীর খোলা রেখে কোমরে স্কার্ট ও মাথায় টুপি ও নাকে এক ধরনের সাদা অলঙ্কার পরে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। ছবিতে এক দানি আদিবাসী নারী।
ঐতিহ্যবাহী সাজে সেজেছে এক দানি আদিবাসী পুরুষ।
বছরের একমাত্র উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য ঐতিহ্যবাহী সাজে বাচ্চা দুটিকে সাজিয়েছে ওদের মায়েরা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.