সম্রাট—ইন্টার মিলানের সমর্থকেরা আদর করে তাকে এই নামেই ডাকত। সেই অর্থে প্রাসাদে না থাকলেও সুরম্য অট্টালিকা ছিল তাঁর ঠিকানা। প্রতিভার কথা বললে অনেকেই তাঁর মধ্যে দেখতেন রোনালদো-রোনালদিনহোর ছায়া। সেই আদ্রিয়ানো এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন? অকালেই আড়ালে চলে যাওয়া ব্রাজিলের এক সময়ের এই তারকা স্ট্রাইকারের ঠিকানা জেনে অনেকেই চমকে উঠতে পারেন। রিও ডি জেনেইরোর এক বস্তিতেই তাঁর বসবাস। সেই বস্তিও আবার কুখ্যাত অপরাধীদের আস্তানা! অস্ত্র আর মাদকের ছড়াছড়ি। ফ্ল্যামেঙ্গোতে আলো ছড়িয়ে পুরো ফুটবল বিশ্বেরই নজর কেড়েছিলেন আদ্রিয়ানো। ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো তাঁকে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ২০০১ সালে সে দৌড়ে জেতে ইন্টার মিলান। এক মৌসুম পর আদ্রিয়ানোকে ধারে ফিওরেন্টিনা নিয়ে নেয়। এর পর পারমা ঘুরে আবার ইন্টারে ফেরেন ২০০৪ সালে। সেখানে ভালোই চলছিল সবকিছু। খেলেছিলেনও দারুণ। ইন্টারের সমর্থকদের কাছে অল্পেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে ২০০৫ সালে কনফেডারেশনস কাপের সেরা ফুটবলার ও সর্বোচ্চ গোলদাতার দুটি পুরস্কার জিতেছিলেন। সেমিফাইনালে জার্মানি আর ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দুই ম্যাচেই করেছিলেন জোড়া গোল। সেবার ফাইনালে তো আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ব্রাজিল। নায়ক ছিলেন আদ্রিয়ানো। কিন্তু সেই নায়কেরই পতন হতে শুরু করল। ডোবাল অতি ফুর্তিবাজ চরিত্রটি। ছুটিতে গিয়ে কারণে অকারণে দেরিতে ফিরতেন ক্লাবে। বিভিন্ন উপলক্ষে অতিরিক্ত পান করতেন। হয়ে যেতেন চূড়ান্ত উদ্দাম। প্রথম দিকে আদ্রিয়ানোর এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যেত ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তবে ধীরে ধীরে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে তারা। এক সময় তাঁকে সাও পাওলোতে পাঠিয়ে দেয় ইন্টার। এরপর আর ইন্টারে ফেরা হয়নি। ফ্ল্যামেঙ্গো-করিন্থিয়ানসের মাঝে এক মৌসুম খেলে যান ইতালির ক্লাব রোমায়। কিন্তু ক্রমে আরও বেশি পানাসক্ত হয়ে পড়েন। আলোর জগৎ থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকেন অন্ধকারে। মিলেমিশে একাকার হয়ে যান রিওর অপরাধ জগতের সঙ্গে। একবার তো মাদক পাচারের দায়ে গ্রেপ্তারও হন। এ বছরের জুলাইয়ে তাঁর রিওর বস্তিতে বসবাসের বিষয়টি নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল। ব্রাজিলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরও আসে। রিও অলিম্পিক চলার সময় পুরো বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ ছিল সেখানে। ফলে আদ্রিয়ানোর বস্তিবাসের জীবনটাও ফলাও করে উঠে আসে। টুইটার আর সংবাদমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ছবি দেখে বোঝা যায়, এক সময় বিলাসবহুল জীবনযাপন করা আদ্রিয়ানো বস্তির জীবনে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন ভালোভাবেই। জীবন বাঁচিয়ে রাখতে রেড কমান্ড গ্যাংকে নাকি নিয়মিত মাসোহারাও দেন! এই দলটির সঙ্গে রাইফেল হাতে ছবিও এসেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে—হাতে বিরাট এক রাইফেল নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন আদ্রিয়ানো। ভাবা যায়! আসলে কিসের টানে সব পেয়েও সব হারালেন অমিত প্রতিভাবান এই ফুটবলার? উত্তর একটাই—সর্বনাশা মাদক কেড়ে নিয়েছে তাঁর সব। আদ্রিয়ানোর জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বৈকি!