সুনীল গাভাস্কারের ব্যাটিং বীরত্বের কাহিনি সবার মুখে মুখে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ১০ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়া এই কিংবদন্তির সামনে ব্যাকফুটেই চলে যেতেন বোলাররা। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই তারকার মানবিকতাবোধের সামনে যে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রও ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল, সে খবর খুব বেশি মানুষ রাখেন না। খুব বেশি মানুষ জানেন না, কীভাবে গাভাস্কার নিজের জীবন তুচ্ছ করে, নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলে আক্রমণকারীদের হাত থেকে, আক্রোশ থেকে বাঁচিয়েছিলেন একটা পুরো পরিবার। গাভাস্কারের জীবনের এমন একটা ঘটনাই উঠে এসেছে তাঁর ছেলে রোহান গাভাস্কারের জবানিতে। মুম্বাইয়ের ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় রোববারের এক আনন্দসন্ধ্যায় ছেলে রোহান এই গল্পে আবেগাপ্লুত করলেন সবাইকে। সাবেক মুম্বাই ক্রিকেটার, গাভাস্কারের সতীর্থ মিলিন্দ রেগে, মাধব আপ্তে ও অজিত ওয়াদেকারের উপস্থিতিতে মুম্বাইভিত্তিক সাংবাদিকেরা সেই সন্ধ্যায় বিশেষ সম্মাননা জানিয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ককে। মিলিন্দ, মাধব কিংবা অজিত ওয়াদেকারের কণ্ঠে বারবার উঠে আসছিল গাভাস্কারের অজানা কাহিনিগুলো। মঞ্চে উঠে ছেলে রোহান যা বললেন তাতে স্তব্ধ সবাই। রোহানের মুখে এই কাহিনিতে উঠে আসে ব্যাটসম্যান গাভাস্কারের চেয়ে মানুষ গাভাস্কার, কিন্তু কম মহৎ নন। কী সেই কাহনি? রোহান বলেছেন, সময়টা ১৯৯৩ সালের। গাভাস্কার খেলা ছেড়েছেন তত দিনে ছয় বছর হয়ে গেছে। মুম্বাই শহরের জন্য সে সময়টা মোটেও শান্তিপূর্ণ ছিল না। কয়েক দিন আগেই ঘটে গেছে মুম্বাইয়ের বাণিজ্যকেন্দ্রে সেই ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ। বাবরি মসজিদ-কাণ্ডে গোটা ভারতই তখন অশান্ত। রোহান বলেছেন, ‘একদিন সন্ধ্যায় আমরা গল্প করছিলাম আমাদের বাড়ির ব্যালকনিতে। হঠাৎ দেখি কয়েকজন সন্ত্রাসী একটি পরিবারের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে। আমাদের বাড়ির নিচেই উন্মত্ত সন্ত্রাসীরা সেই পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। হিংসা-বিদ্বেষ ফুটে বের হচ্ছিল সেই সন্ত্রাসী, উন্মত্ত দলটির লোকজনের চোখমুখ দিয়ে।’
দৃশ্যটা সহ্য করতে পারেননি ক্রিকেট গ্রেট গাভাস্কার। ক্রিকেটের বাইশ গজে খেলোয়াড়ি মানসিকতার জন্য সুপরিচিত গাভাস্কার দৌড়ে নিচে গেলেন। উন্মত্ত দলটির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন। বললেন, “দেখো! এই পরিবারটির কিছু করতে চাইলে আগে আমার ক্ষতি করতে হবে। আমাকে মারতে হবে।” উন্মত্ত মানুষগুলো এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়ার নেশায় যেন পেয়ে বসেছিল। গাভাস্কার কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিতে পিছপা হননি। চোখের সামনে অসহায় একটি পরিবারকে কচুকাটা হতে দেখতে চাননি। গাভাস্কারের সোচ্চার আহ্বানে শুভবুদ্ধির উদয় হয় সেই দলের। অসহায় পরিবারটি প্রাণে বেঁচে গেল। রোহান গর্ব নিয়েই বলেছেন প্রিয় ‘পাপা’র সাহস আর মানবিকতার কথা, ‘অমন কিছু করতে গেলে সত্যি সত্যি অনেক সাহসের দরকার হয়।’ ক্রিকেটের মাঠে গাভাস্কার কিংবদন্তি, জীবনের গল্পে তিনি সত্যিকারের বীর। ক্রিকেট গ্রেট সেখানে মানবিকতার সোচ্চার দূত
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.