আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকৃত ও বিনষ্ট করতে চেয়েছিল জাসদ, এমনকি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিবেশও তৈরি করেছিল দলটি। যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে অতিবিপ্লবী, তাদের হটকারী আখ্যা দিয়ে শতভাগ ভণ্ড বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ছাত্রলীগের এক সভায় সৈয়দ আশরাফ এসব কথা বলেন।
ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী কর্মশালা ও বর্ধিত সভার শেষদিন আজ বিকেলে ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে সৈয়দ আশরাফ তুলে ধরেন স্বাধীনতাউত্তর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আদর্শবাহী জাসদ ছাত্রলীগের নেতিবাচক ভূমিকা। এ সময় তিনি কড়া সমালোচনা করেন জাসদের রাজনীতির।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জাসদ নামের একটা রাজনৈতিক সংগঠন করে। আর এখন আমাদের লেজুড়বৃত্তি। একজনকে মন্ত্রী দেওয়া হইছে। এই যে একটা সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে যদি একটা ভুল করে তার প্রায়শ্চিত্য কিন্তু সারা জীবনই করতে হয়। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরার আগেই এই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা দেশটাকে আবার ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছে। তারা ভণ্ড। তারা আপনার বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলছে। তারা একশ ভাগ ভণ্ড।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নষ্ট করেছে জাসদ। তাঁর মতে, নব্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাসদ ইতিবাচক ভূমিকা রাখলে এতদিনে আরো এগিয়ে যেত বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল জাসদ।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সেটাকে এই জাসদ নামক বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ যেন কোনোদিনই একটি কার্যকরী রাষ্ট্রে পরিণত হতে না পারে। এই বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অংশকে কিভাবে ষড়যন্ত্র করে একটা সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা হয়েছিল। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যদি তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সমস্ত পরিবেশ সৃষ্টি না করত তাহলে আজকের বাংলাদেশ ভিন্ন বাংলাদেশ হতো।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এসব ইতিহাস জানা থাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মেধাবী ও যোগ্যতা দিয়ে ছাত্রলীগ পরিচালনা করতে সংগঠনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসসের এক খবরে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের ওই সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দী, র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না ও সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন দেশটিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। সে সময় হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা দেশটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। এই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা জাসদ নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় তারা দেশকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের দাবিদাররা সফল রাজনৈতিক দল হতে পারত। কিন্তু তাদের হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য তারা তা পারেনি। হঠকারিতা কখনও গঠনমূলক কাজ করতে পারে না উল্লেখ করে আশরাফ বলেন, যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিল তারা নিজেদের ভণ্ড হিসেবে প্রমাণ করেছিল। তারা অনেক ছাত্রের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কথা উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আমরা যখন মধুর ক্যান্টিনে চা খেতাম তখন কমিউনিস্ট পাটির বন্ধুরা হোটেল শেরাটনে বসে রেড ওয়াইন খেত।’ আশরাফ বলেন, যারা বিপ্লবের কথা বলে তারা কখনও বিপ্লব সফল করতে পারে না। আর যারা মুখে বড় বড় কথা বলে তাদের সাহস খুবই কম। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমান তালে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বঙ্গবন্ধু বাংলাকে আপনাদের পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.