প্রথম ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয়ের পর অর্ধেক বিপদ কেটে গেছে বলে জানিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেট বলে কথা। এখানে সবই সম্ভব। কে জানতো দ্বিতীয় ম্যাচে আরো বড় বিপদ অপেক্ষা করছিল বাংলাদেশের জন্য! টসে জিতেই বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক আসগর স্তানিকজাই। যেন আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন এই উইকেটে তার স্পিনারদের সামলানো কঠিন হবে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। প্রথম ম্যাচে পেসাররা উইকেট বেশি পেলেও মিরপুরের উইকেটে দুই দলের খেলোয়াড়দেরই সমীহ করতে হয়েছে স্পিনারদের। উইকেট কম পেলেও স্পিনাররা রান দেয়াতে ছিলেন কৃপণ। তাই আফগান অধিনায়ক ধরেই নিয়েছিলেন স্পিনাররাই বাজিমাত করবেন। যদিও গতকাল পেসার মিরওয়াইস আশরাফ প্রথম উইকেট উপহার দেন। পরের উইকেটটাও তার। সৌম্যকে ফেরান তিনি। এরপর স্পিনার মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান আর রহমত শাহর পালা। আগের দিন পাঁচ বোলারকে ব্যবহার করেছিলেন আফগানরা। তার মধ্যে দুইজন স্পিনার। গতকাল ৬ বোলারকে খেলালেন তার মধ্যে তিন স্পিনার। তারাই নিলেন ৫ উইকেট। অবশ্য মোসাদ্দেক হোসেনের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ২০৯ রানের লক্ষ্য দিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুর শেরবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চার বল আগে অলআউট হওয়ার আগে ২০৮ রান করে বাংলাদেশ। অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবীকে দিয়ে এদিন বোলিং আক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তান। নতুন বলে পেসার দৌলত জাদরানও আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেঁধে রাখেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারকে। তবে ব্যাটিংয়ে প্রথম ১০ ওভার নিরাপদেই কাটিয়ে দেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। কিন্তু স্কোর বোর্ডে ওঠে মাত্র ৪৫ রান। এরপর থেকেই শুরু বিপত্তিটা। মিরওয়াইস আশরাফের পরপর দুই ওভারে বাজে শটে আউট হন তামিম ও সৌম্য। আশরাফের শর্ট বলে চড়াও হয়ে মারতে গিয়ে থার্ড ম্যানে জদরানের হাতে ক্যাচ দেন তামিম। তবে একপাশ আগলে রাখার চেষ্টা করেন সৌম্য। এটি ছিল তার রানে ফেরার লড়াইও। কিন্তু অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে কাভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মাত্র ২০ রান করে। মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে দুই ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে দলের সেরা দুই ব্যাটিং ভরসা মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহীম। ইমরুল কায়েস বাদ পড়ায় তিন নাম্বারে খেলতে নেমেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। আর তাকে চারে সঙ্গ দিতে আসেন ভায়রা মুশফিক। আফগান অধিনায়ক বল তুলে দেন দুই লেগ স্পিনারের হাতে। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ১১১/২। সেখান থেকে যেন মড়ক লাগে। মাত্র ৪০ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে টাইগাররা। বিপদটা শুরু হয় ৬১ রানের জুটি গড়া মাহমুদুল্লাহর বিদায়ে। পেসার নাভিন উল হকের স্ট্যাম্পের বাইরের বল টেনে এনে বোল্ড হন তিনি। আর ব্যক্তিগত ৩৮ রানে লেগ স্পিনার রহমত শাহর বলে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন মুশফিক। প্রথম ম্যাচেও তিনি আউট হয়েছিলেন তার এই প্রিয় সুইপ শটে লেগ স্পিনার রশিদের বলে। এরপর বড় বিপদ হয় বাংলাদেশের দুই ভরসা সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সাজঘরে ফিরে গেলে। ১৭ রানে একবার জীবন পাওয়ার পর নবীর সেই ওভারেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাকিব। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় সাকিবের ব্যাটের কানায় লেগেছিল বল। এরপর রশিদের লেগ স্পিনে আবার বিদায় হন সাব্বির। প্রথম ম্যাচের মতো এবার গুগলিতে বিতর্কিত এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন তিনি। সাব্বিরের বেলায়ও টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে বল তার ব্যাটের কানায় লেগেছিল। অবশ্য আফগান স্পিনারাও সুবিধা পাচ্ছিল উইকেট থেকে। কারণ মিরপুরের এই উইকেটে বল একটু থেমে আসছিল। বল খানিকটা ঘুরছিল। নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন আফগান স্পিনাররাও। বিশেষ করে গুগলি বুঝতে খুবই সমস্যা হচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের। তবে এর মাঝেও দলের ত্রাতা হয়ে মাঠে নামেন অভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে দলকে ভীষণ বিপদে দেখেন মোসাদ্দেক। এই তরুণের ওপর চাপ কমাতে গিয়ে আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সফল হননি, নবীর বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। কিন্তু দিনটি যেন ছিল সৈকতেরই। প্রথমে তাইজুলকে সঙ্গে নিয়ে ২৪ রানের জুটি গড়েন। এরপর পেসার রুবেল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ৪৩ রানের জুটি গড়ে দলের স্কোর বোর্ডে ২০০ রানের পুঁজি এনে দেন। সেই সঙ্গে স্কুপ করে ছক্কা, কাট করে চারের মারে গ্যালারিতে থাকা ভক্তদের জাগিয়ে তোলেন মোসাদ্দেক। ৪৯তম ওভারে দৌলতের শর্ট বলে পুল করে যে ছক্কা হাঁকান সেটি ইনিংসেরই সেরা শট।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.