‘ঐতিহাসিক পরাজয়ের’ মুখে পড়েছে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (সিডিইউ)। রোববার বার্লিনে রাজ্য বা প্রাদেশিক নির্বাচন হয়। এতে সিডিইউ বড় ধরনের পরাজয়ের মুখে পড়ে। এমনই পরাজয় যে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একে ঐতিহাসিক পরাজয় বলে আখ্যায়িত করছেন। উল্টো এতে বড় সাফল্য পেয়েছে অভিবাসন ও শরণার্থী বিরোধী হিসেবে পরিচিত নতুন রাজনৈতিক দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। বলা হচ্ছে, গত বছর যখন ইউরোপে শরণার্থীদের ঢল নামে তখন তাদের জন্য দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। এজন্য দেশের রাজনীতিতে তিনি বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে তার দল। বার্লিনে এ পরাজয়ের ফলে রাজ্য সরকারের জোট থেকে উৎখাত হয়েছে সিডিইউ। তারা এ রাজ্যে জোট সরকার গঠন করেছিল মধ্য-বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের সঙ্গে। এখন তাদের ক্ষমতাচ্যুত করে ডানপন্থি ও অভিবাসন বিরোধী দল এএফডি সেই স্থান দখন করছে। ফলে প্রথমবারের মতো এ দলটি রাজ্য পার্লামেন্টে জায়গা করে নিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় বড় নির্বাচনী আঘাত এসেছে সিডিইউয়ের প্রতি। এ মাসের শুরুতে মেকলেনবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পোমেরানিয়াতে তাদের পরাজিত করে এএফডি। সেখানে সিডিইউ চলে যায় তৃতীয় স্থানে। উল্লেখ্য, এ রাজ্যটি চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের নিজের। এখানকার পরাজয়কে তাই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য বিরাট একটি আঘাত হিসেবে দেখা হয়। তখন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়, ওই আসনে ভয়াবহ ভরাডুবি ঘটেছে মার্কেলের। তারপর বার্লিনে শুধু পরাজিতই হচ্ছেন এমন না, একই সঙ্গে রাজ্য সরকার থেকে তারা ক্ষমতাচ্যুত হচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মধ্যে এ বছরে অনুষ্ঠিত ৫টি রাজ্য পার্লামেন্ট বা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের সবগুলোতেই বড় ধরনের উত্থান ঘটলো অভিবাসন ও শরণার্থীবিরোধী হিসেবে পরচিতি নতুন দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি বা এএফডির। রোববারের নির্বাচনে বড় ধরনের সাফল্য পেয়ে ডানপন্থি এ দলটি প্রথমবাররে মতো বার্লিনের সিনেটে জায়গা করে নিয়েছে। এর মাধ্যমে মার্কেলের অভিবাসন নীতির বিরোধিতা করে জনপ্রিয়তা পাওয়া এএফডির এখন ১৬টির মধ্যে ১০টি রাজ্য পার্লামেন্টেই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হলো। নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রাটদের ভোট কমেছে ১৮ শতাংশের মতো, যা তাদের রাজ্য কোয়ালিশন সরকার থেকে বেরিয়ে আসতেও বাধ্য করতে পারে। অন্যদিকে অভিবাসন বিরোধী এএফডি ১৪ শতাংশ ভোটারের সর্মথন লাভ করেছে। দেশটির নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী কোনো দল ৫ শতাংশ ভোট পেলে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের শরণার্থীদের জন্য দরজা খুলে দেয়ার নীতি মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এমন ফল উদারপন্থিদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বার্লিন নির্বাচনে সোশ্যাল ডেমোক্রেট এসপিডি দলটি শতকরা প্রায় ২২ ভাগ ভোট পেয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এএফডি তাদের দৃঢ়তা দেখিয়েছে। তারা পেয়েছে শতকরা ১৪ ভাগ ভোট। এর ফলে এ দলটির সহ-সভাপতি জর্জ মুথেন বলেছেন, আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে তার দল শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে। তার প্রমাণ মিলেছে এ নির্বাচনে। তিনি আরও বলেছেন, আগামী বছর জাতীয় নির্বাচনে আমরা দুই অঙ্কের ব্যবধানে নির্বাচিত হবো বলে নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মেছে। এমন অবস্থায় সিডিইউর অঙ্গ সংগঠন সিএসইউয়ের নেতা অর্থমন্ত্রী মারকাস সোয়েডার নির্বাচনের এ ফলকে জেগে ওঠার জন্য দ্বিতীয় ডাক বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি দৈনিক বিল্ড পত্রিকাকে বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে এবং ব্যাপকভাবে হেরে যাওয়ায় রক্ষণশীল ভোটারদের ভোট নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তাই অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের ডান-বামপন্থি জাতীয় জোটকে তার অভিবাসন নীতি পরিবর্তন করে ভোটারের আস্থা ফেরাতে হবে। বার্লিন হলো ৩৫ লাখ মানুষের একটি শহর। এখানে স্থানীয় ইস্যুগুলোকে বড় করে দেখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নাজুক জনসেবা। জরাজীর্ণ স্কুল ভবন। রেল ও আবাসনের সঙ্কট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.