আমড়া গাছে অনেক গুলো পাখি বসে আছে। গাছে অনেক আমড়া ধরছে। প্রতিটি ডালে অনেক অনেক আমড়া। এত আমড়া ধরেছে যে বেশকিছু ডাল ঝুলে পড়েছে সে আমড়ার ভারে। পাখিগুলো আমড়া কামড়াচ্ছে মনের আনন্দে। আর কিচিরমিচির করে গল্প করছে। গল্পগুলোর ও কোন ঠিক ঠিকানা নেই। কে কোথায় গেছে এসব গল্প। …..
উত্তর দিকের মধ্য ডালটাতে বসে আছে মা পাখি। তার পাশেই বাচ্চা পাখি। কয়েক দিন আগে বাচ্চা পাখিটা হয়েছে। মা পাখি বাচ্চা পাখিটাকে অনেক আদর করেন। এখনো বাচ্চা পাখিটা উড়তে পারে না ঠিকমত। এজন্য মা পাখিটা বাচ্চা পাখিটাকে সব সময় কাছে কাছে রাখেন।
আগে খাবারের জন্য মা পাখিও যেতেন। এখন যান না। বাবা পাখি খাবার নিয়ে আসে। সেটাই ভাগ করে খান। তবে বাচ্চা পাখিটা অনেক দুষ্ট। শুধু উড়তে চায়। পড়ে যায় তারপরও উড়তে চায়।
মা পাখি মানা করেন, শুনো এভাবে উড়তে যেয়ো না। পড়ে গেলে ব্যথা পাবে।
বাচ্চা পাখি বলে, মা আমি নিজে উড়তে না চাইলে কিভাবে উড়তে পারবো। সবাই কি সুন্দর উড়তে পারে। আমি কেন উড়তে পারবো না?
মা পাখি হাসেন। তুমি উড়তে পারবা তো। আরেকটু বড় হও। তুমি উড়ে কি করবা?
-আমি অনেক দূরে যাবো। অনেক দূরে। -দূরে গেলেতো হারিয়ে যাবা। – নাহ হারাবো না। রাস্তা দেখে দেখে যাবো। আবার সে রাস্তা দেখে ফিরে আসবো। দেখো না বাবা কত দূরে চলে যায়। আবার আমাদের কাছে ফিরে আসে।
মা পাখির ভাল লাগে বাচ্চা পাখির কথা শুনে। কি মিস্টি গলায় কথা বলে। – ঠিক আছে তুমি অনেক দূর যেয়ো। তবে সেজন্য আগে তোমাকে বড় হতে হবে।
বাচ্চা পাখি বলে, মা আমি আমড়া খাবো। সবাই খাচ্ছে। আমিও খাবো। -ওরা তো বড়। তাই খাচ্ছে। তুমি এখনো ছোট। তোমার ঠোট অনেক নরম। তুমি খেতে পারবে না। – খেলে কি হবে? – তোমার ঠোঁট ভেঙে যাবে। ব্যথা পাবে।
বাচ্চা পাখি এটা বিশ্বাস করে না। বলে, নাহ ঠোট ভাঙবে না। আমি আমড়া খাবো।
এবার মা পাখিটা বলে, আমড়া অনেক টক। তোমার খারাপ লাগবে।
অন্য পাখিগুলোর দিকে দেখিয়ে বাচ্চা পাখিটা বলে, নাহ খারাপ লাগবে। ঐ দেখো সব পাখি কি আনন্দে খাচ্ছে। আমিও খাবো। নিরুপায় হয়ে মা পাখিটা আমড়ার একটা মুখে নেন। তারপর সেটা নরম করে বাচ্চা পাখির মুখে দেন।
বাচ্চা পাখি সেটা খেতেই চিৎকার দিয়ে উঠে। এত টক কেন? মুখ চুলকাচ্ছে। মা পাখি বলেন, আমি তো আগেই বলেছিলাম তোমাকে। তুমি তো আমার কথা শুনলে না।
বাচ্চা পাখি কান্না জুড়ে দেয়। মা পাখি বলে, দেখছো নিষেধ করছি না। তা শুনো নাই বিধায় এই অবস্থা। তোমার বাবা আসুক তাকে মিস্টি আনতে বলবো।
বাচ্চা পাখিটা জিজ্ঞেস করে, মিস্টি খেলে কি হয়? এই যে তোমার টক লাগছে তা মিস্টি খেলে চলে যাবে। মুখ আর চুলকাবে না।
এবার পাখিটা কান্না করতে করতে বলে, আমি মিস্টি খাবো। তাড়াতাড়ি মিস্টি দাও।
-একটু অপেক্ষা করো। তোমার বাবা আসলেই আনতে বলবো। না অপেক্ষা সয় না বাচ্চা পাখিটার। ওর অনেক টক লাগছে। মুখও চুলকাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে বলে, না এখন লাগবে। আমাকে এখন মিস্টি এনে দাও।
মা পাখিটা বুঝানোর চেষ্টা করে, শুনো এখানে কাছে যেসব মিস্টির দোকান আছে সেখান থেকে মিস্টি আনা কঠিন। তোমার বাবা যেখান থেকে মিস্টি আনা সহজ সেখান থেকে এনে দেবে।
বাচ্চা পাখিটা বুঝে না। মিস্টি লাগবেই। বাচ্চা পাখিটার কান্না বাড়তেই থাকে।
শেষে মা পাখিটা আর না পেরে মিস্টি আনার জন্য উড়াল দেয়। বেশি দূর যাওয়া যাবে না। কাছের মিস্টির দোকানটা দেখে। মিস্টি গুলো কাঁচের বক্সে রাখা। অনেক রকমের মিস্টি রাখা। একটুখানি দরজা খোলা। দোকানদার পত্রিকা পড়ছে। তাই দেখে মা পাখিটা আস্তে করে বক্সে ঢুকে পড়ে মিস্টির জন্য।
দোকান কর্মচারিটা সেটা দেখে ফেলে। সে সাথে সাথে ঐ কাঁচের বক্সের দরজা বন্ধ করে দেয়। পাখিটি ধরতে বেশি কষ্ট করতে হয় না।
ম্যানেজার খুশী পাখিটা পেয়ে। খাঁচায় রাখা যাবে।
এদিকে আমড়া গাছে বাচ্চা পাখিটা অপেক্ষা করে আছে মা কখন মিস্টি নিয়ে আসবে। তার অপেক্ষা যে কখনো শেষ হবে না সে কি জানে?
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.