যশোরে এক চীনা ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার উপশহর এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁকে সম্ভবত পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁর সহকারীসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম চ্যাং হিং সং (৪৬)। তিনি সস্ত্রীক ঢাকায় থাকতেন এবং চীন থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক আমদানি করে যশোরে বিক্রি করতেন। আটক দুজন হলেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার চশপাড়া গ্রামের মোহিরন রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান (২৫) ও তাঁর (নাজমুল) ভাইপো একই এলাকার রফিকুল আলমের ছেলে মুক্তাদির আহমেদ ওরফে রাজু (২২)। নাজমুল নিহত ব্যক্তির দোভাষী ও একান্ত সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। মুক্তাদিরকে আটকের পর গতকাল পুলিশ তাঁকে ঘটনাস্থলে হাজির করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, বুধবার দুপুরে তাঁরা রড দিয়ে ওই চীনা নাগরিকের মাথা ও পিঠে আঘাত করলে তিনি মারা যান। যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অর্থ আত্মসাৎকে কেন্দ্র করে দুজনে মিলে চীনা ওই নাগরিককে হত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রথমে একজনকে ও পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপরজনকে আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাত ১২টার দিকে নাজমুল থানায় এসে চীনা নাগরিক নিখোঁজ হওয়ার খবর জানান। কিন্তু তাঁর অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাঁকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উপশহরে ইজিবাইক রাখার একটি গুদাম থেকে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার ও মুক্তাদিরকে আটক করা হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের পরিদর্শক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি মুঠোফোন, কলম ও একটি ব্লেড জব্দ করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের দাগ ছিল। গলায় ফাঁস লাগানো ও পা বাঁধা ছিল। রড দিয়ে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তি সাত মাস আগে যশোর উপশহরের মহিলা কলেজের পাশে হামিদা ভিলার নিচতলা গুদাম হিসেবে ভাড়া নেন। স্ত্রী ট্রামা লাইনকে নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকতেন। মাঝেমধ্যে যশোরে আসতেন। যশোর ঘোপ বেলতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসাও আছে তাঁর। নাজমুল একান্ত সহকারী হিসেবে তাঁর ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। কয়েক দিন আগে নাজমুল গ্রাম থেকে মুক্তাদিরকে নিয়ে আসেন। স্বামী নিহত হওয়ার খবরে চ্যাংয়ের স্ত্রী গতকাল ঢাকা থেকে যশোরে এসেছেন। সকালে চীনা নাগরিক হত্যার খবর পেয়ে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একরামুল হাবিব, জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবার যেভাবে চায়, সেভাবেই লাশ হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.