ঢাকার চারটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২৭টি হত্যা মামলার বিচার থেমে আছে বছরের পর বছর ধরে। এর মধ্যে ১০ বছরের বেশি সময় থেমে থাকা মামলা আছে ১৫টি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ও সময়মতো সাক্ষী হাজির না করার কারণেই এসব মামলার কার্যক্রম আটকে গেছে। জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকে বলেন, চার ট্রাইব্যুনালে কতটি মামলার বিচার বন্ধ রয়েছে, সেই তালিকা পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালত সূত্র বলেছে, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সর্বাধিক ১১টি হত্যা মামলার বিচার বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বহুল আলোচিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা রয়েছে। ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বন্ধ রয়েছে পাঁচটি হত্যা মামলার বিচার। এ ছাড়া ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বন্ধ রয়েছে সাতটি হত্যা মামলা। ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বন্ধ আছে চারটি হত্যা মামলার বিচার। এসব হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে দ্রুত বিচারের জন্য এই চারটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছিল। স্থগিতাদেশ হওয়া হত্যা মামলাগুলোর কোনোটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল, কোনোটি ছিল যুক্তিতর্কের পর্যায়ে। বাকি মামলাগুলো সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ের। ১৫ বছর আগে খুন হন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব আফজাল হামজা কাইয়ুম চৌধুরী। ওই বছরই চার আসামির বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন ২০০৪ সালের ৭ মার্চ। কিন্তু আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেদিনই মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই থেকে মামলাটির বিচার বন্ধ রয়েছে। ঢাকার ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মামলা শেষ করার কথা ১৩৫ কার্যদিবসে। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় এসব মামলার বিচার বন্ধ থাকছে বছরের পর বছর। ফিরে গেছে ৬৬টি হত্যা মামলা: সূত্র জানায়, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ঢাকার চারটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে গত ১৪ বছরে ৬৬টি হত্যা মামলা ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে থেকে গেছে সাতটি মামলা, ২ নম্বর ট্রাইব্যুনাল থেকে গেছে ১৫টি, ৩ নম্বর ট্রাইব্যুনাল থেকে ৩৬টি এবং ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে ফেরত গেছে আটটি হত্যা মামলা। ঢাকার ২ নম্বর ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় সম্প্রতি দুটি হত্যা মামলা ফেরত পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে একটি মামলা হলো রমনা থানায় করা আমির হোসেন হত্যা মামলা। ২০০৬ সালে আমির হোসেনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে মামলা ফেরত যাওয়ার মূল কারণ সাক্ষী হাজির করতে না পারা। সাক্ষী না আসার কারণে মামলার বিচার আর শেষ হয়নি। যদিও আদালত থেকে সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছিল। ঢাকার ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি সৈয়দ শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত বিচার আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ করতে না পারায় ট্রাইব্যুনাল এসব হত্যা মামলা ফেরত পাঠিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.