নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার জন্য আগামীকাল রোববার বিকেলে বঙ্গভবনে যাচ্ছে বিএনপি। দশ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এই অনাস্থা কাটানোর জন্যই বিএনপি একটি নিরপেক্ষ ও সাহসী নির্বাচন কমিশন গঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি মোটামুটি পূরণ হলে চলমান বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টানোর ক্ষেত্রে একটা ভালো বার্তা দেবে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির মুখ্য দাবি হবে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশন গঠন। তার আগে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ইসির জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা। এ প্রক্রিয়ার সহায়ক হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে নিজেদের প্রস্তাবিত ১৩ দফা তুলে ধরবে বিএনপি। সার্চ কমিটির জন্য কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের নামও প্রস্তাব করবে।
গত ১৮ নভেম্বরে খালেদা জিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ইসি ও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন, যার মূল কথা ছিল ‘সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সকল রাজনৈতিক দলের’ মতৈক্যের ভিত্তিতে নতুন ইসি গঠন করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুষ্ঠু ও সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে, সেই ধরনের একটি যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করবার জন্য আমরা বারবার বলে এসেছি। সে জন্য একটা প্রস্তাবও দিয়েছেন আমাদের নেত্রী। আমরা সেই প্রস্তাব পেশ করব।’
কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এরপর নতুন ইসি দায়িত্ব নেবে। ওই কমিশনের অধীনেই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
আগামীকাল রোববার বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হবে। এই ধাপে জাতীয় পার্টি (জাপা), এলডিপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং জাসদকেও (ইনু) ডাকা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বসবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জানা গেছে, নতুন ইসি গঠন বিষয়ে আলোচনার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে চলতি মাসের শেষের দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডাকতে পারেন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম ধাপের আলোচনা শেষে আরও ১০ থেকে ১২টি রাজনৈতিক দলকে ডাকা হবে। আওয়ামী লীগকে কখন ডাকা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন ও সম্পাদকমণ্ডলীর চারজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ইসি গঠনে সব দলের প্রস্তাব দেখে তারপর নিজেদের করণীয় ঠিক করবে আওয়ামী লীগ।
সম্পাদকমণ্ডলীর দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার আমন্ত্রণ পেলে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবেন। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব না-ও দিতে পারে। অন্য দলগুলোর প্রস্তাব নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
আওয়ামী লীগ কী ধরনের প্রস্তাব দিতে পারে—জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধানে যা আছে, সেটাই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। রাষ্ট্রপতি যেটা করবেন, সেটাই আমরা মেনে নেব।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.