এখনো অচেতন সিলেটে বর্বর নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সুমা বেগম। তার জ্ঞান ফিরেনি। জিহ্বায় করা হয়েছে অস্ত্রোপচার। স্বামীর নির্যাতনে ছিন্ন-ভিন্ন দেহ থেকে ঝরছে রক্তও। অবস্থা তেমন ভালো নয়। ডাক্তাররা কোনো সুখবর দিতে পারেননি। বলছেন দোয়া করতে। কিন্তু সান্ত্বনা পাচ্ছে না সুমার পরিবার। সাধ্য নেই উন্নত চিকিৎসা করার। এ কারণে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই তাদের শেষ ভরসা। সুমার পাশে বসছে কাঁদছেন বৃদ্ধা মা আয়মন বিবি। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ভাই হাফিজুর রহমানও। তিনি স্ত্রী রুমাকে সঙ্গে নিয়ে বোনের চিকিৎসা করাতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এদিকে সুমার ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় পুলিশ খুঁজে ফিরছে স্বামী বেলাল আহমদকে। তাকে গ্রেপ্তারে রাতেই শহরতলির খানুয়া গ্রামসহ একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পায়নি। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হামলায় আক্রান্ত হওয়া গৃহবধূ সুমার বড় ভাই হাফিজুর রহমান। মামলায় তিনি আসামি করেছেন সুমার স্বামী বেলাল আহমদ, তার ভাই হেলাল আহমদ, কামাল আহমদ ও মা জয়বুন্নেছাকে। মামলা দায়েরের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে হেলাল ও কামাল। তবে পুলিশ গতকাল সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার খানুয়া গ্রাম থেকে বেলালের মা জয়বুন্নেছাকে আটক করেছে। এ সময় পুলিশ আরো কয়েকজন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান, বর্বরোচিত এ ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ তৎপর হয়ে উঠেছে। বেলালকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ মামলার আসামি জয়বুন্নেছাকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, বেলাল গ্রেপ্তার হবেই। সে সিলেটেই রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। সিলেটের পশ্চিম দর্শা গ্রামের মৃত আব্দুল আলীর মেয়ে সুমা বেগম সুনাবি। পরিবারের বড় আদরের মেয়ে সে। ২০০৮ সালে সে বিয়ে করে খানুয়া গ্রামের গাড়ির ইঞ্জিনিয়ার বেলাল আহমদকে। বিয়ের পর বেলালের সঙ্গে সে স্বামীর বাড়ি গিয়েছিল। কিন্তু শাশুড়ি জয়বুন্নেছা এ বিয়েতে রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে ঘটে বিপত্তি। এ কারণে শাশুড়ির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সুমার জীবন। পরবর্তীতে স্বামী বেলাল আহমদও তার মায়ের পক্ষ নিয়ে সুমার ওপর নির্যাতন চালায়। এসব কারণে জীবন রক্ষা করতে সুমা চলে এসেছিল নিজের বাড়ি পশ্চিম দর্শা গ্রামে। সুমা পিত্রালয়ে আশ্রয় নেয়ার পর শাশুড়ি জয়বুন্নেছাই ছেলেকে বাদাঘাটে বিয়ে করান। আর ওই বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য বারবার চাপ প্রয়োগ করছিল স্বামী বেলাল আহমদ। সুমার ভাই হাফিজুর রহমান মামলার এজাহারে জানান, তার বোন বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দাবি করা ৫ লাখ টাকার মধ্যে ৩ লাখ টাকা দেয়। বাকি দুই লাখ টাকা না দেয়ায় তার বোনের জিহ্বা কেটে নেয়া হয়। পাশাপাশি বাম পায়ের রগ, ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। মেরুদণ্ডে কয়েকটি কোপ দেয়া হয়। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডাক্তাররা সুমার জিহ্বাসহ পিঠে অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু বাম পায়ে অস্ত্রোপচার করতে পারেননি। কারণ, পায়ের রগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কোনোমতে ডাক্তাররা রক্তক্ষরণ বন্ধ করে ব্যান্ডিজ করে দিয়েছিলেন। একটু শুকানোর পর গতকাল রাতে সুমার বাম পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। সুমার ভাই হাফিজুর রহমান জানান, ডাক্তাররা বলেছেন রাতে অস্ত্রোপচার করা হবে। পায়ের রগ খুঁজে জোড়া লাগাতে হবে। অন্যথায় পা পুরোপুরি অবশ হয়ে যেতে পারেন। তিনি বলেন, পায়ের রগ পুরোপুরি কেটে দেয়া হয়েছে। এজন্য ডাক্তাররা আশঙ্কা করছেন, সুমা সুস্থ হলেও অজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে নেবে। এদিকে, সুমার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ বেড়েছে এলাকায়। গতকাল স্থানীয় লোকজন এ ঘটনাকে পাশবিক বলে উল্লেখ করেছেন। জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে সুমার ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অজ্ঞাত স্থান থেকে বেলালের ফোন: সুমার ওপর হামলার ঘটনায় বেলাল পলাতক। পুলিশ খুঁজছে তাকে। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা না দিয়ে গতকাল বেলা দুইটার দিকে সুমার ভাবী রুমা বেগমের কাছে মোবাইলে ফোন করে বেলাল। এ সময় সে রুমাকে বলে, ‘আপনারা যেভাবে বলবেন সেভাবে বিচার হবে। কিন্তু আমার মাকে রক্ষা করেন।’ জবাবে রুমা বলেন, ‘আপনার মাকে রক্ষা করতে হলে আপনি থানায় গিয়ে হাজির হন। আপনি হাজির না হলে আপনার মাকে তারা ছাড়বে না। আর বিষয়টি এখন আইনিভাবে শেষ হবে। আইনই তোমার বিচার করবে। একথা বলে ফোন রেখে দেন রুমা বেগম।’ রুমা বলেন, ননদের সুখের জন্য বেলালকে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু কোনো বুঝ মানেনি। বরং সে রাগান্বিত হয়ে ২০১৫ সালে সুমার গর্ভে থাকা ৭ মাসের ছেলে সন্তান নষ্ট করেছে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.