বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালান মামলায় আলোচিত ঠিকাদার মাহমুদুল হক ওরফে পলাশ ও বিমানের কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম। গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সোনা চোরাচালানে জড়িত হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ৬৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মুদ্রা বিনিময় সংস্থার মালিকসহ মোট ৬৯ জনের নাম বলেছিলেন। এঁদের ৬১ জনের নামই অভিযোগপত্রে রাখা হয়নি। গতকাল রোববার এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা শেখ নাজমুল আলম বলেন, তদন্তে জবানবন্দিতে নাম আসা ৬১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলেই অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঠিকাদার মাহমুদুল হক, চিফ অব প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং ক্যাপ্টেন আবু মো. আসলাম শহিদ, ফ্লাইট সেবা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক মো. এমদাদ হোসেন, সিকিউরিটি শিডিউলিংয়ের ম্যানেজার মো. তোজাম্মেল হোসেন, বিমানের শিডিউল ব্যবস্থাপক নাসিরউদ্দিন, বিমানের কর্মকর্তা মতিউর রহমান এবং উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক মো. হারুন অর রশীদ। তাঁরা সবাই গ্রেপ্তার হন। এঁদের মধ্যে নাসির ও মতিউর ছাড়া অন্যরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। হারুন অর রশীদ সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান। ঠিকাদার মাহমুদুল হক বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ বলে জানা যায়। মাহমুদুল হক নিজেকে জামালউদ্দিনের ‘ধর্মপুত্র’ বলে পরিচয় দিতেন। মাহমুদুল হক আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, বিমানের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের সুবাদে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি কাজ পান। এ সূত্রে বিমানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। পছন্দের ক্রু বাছাই করে বিভিন্ন ফ্লাইটে ডিউটি বণ্টন করিয়ে তাঁদের িদয়ে তিনি সোনার অবৈধ চালান আনাতেন বলে স্বীকারোক্তিতে জানান মাহমুদুল হক। এসব সোনার বেশির ভাগ ভারতে পাচার হয়ে যেত। বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক মো. এমদাদ হোসেন জবানবন্দিতে আদালতকে বলেন, মাহমুদুল হক সোনা ও মুদ্রা চোরাচালানের একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসায়ী হারুন অর রশীদ আদালতকে বলেন, তাঁর মতো উত্তরার চারটি মানি এক্সচেঞ্জ পরিচালনাকারী আরও ছয়জন সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছরের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত ৩০ নভেম্বর গ্রেপ্তারকৃত বিমানের ছয় কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। মামলার আরেক তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মো. শাহজাহান দাবি করেন, গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন সময় সোনা চোরাচালানের ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাসহ মানি এক্সচেঞ্জের অনেকের নাম বলেছেন। ডিবি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর শুল্ক গোয়েন্দারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনাসহ বিমানের ক্রু মাজহারুল আবছারকে গ্রেপ্তার করেন। মাজহারুল আবছারের জবানবন্দির ভিত্তিতে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।