তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে সবচেয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শুধু তাই নয় পূর্নাঙ্গ সমাধান দাতা হিসেবেও পরিচিত করতে হবে। দক্ষতা, অবকাঠামো নির্মানসহ পোশাক খাতের বিদ্যমান বাধা দূর করতে হবে। তবেই ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন রপ্তানির লক্ষ্যেমাত্রা অর্জন করা যাবে।
গতকাল সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি এবং বিইসিএআই’য়ের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজেএমইএ এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রি (সিইবিএআই) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। বক্তারা বলেন, বিশ্বের বড় বড় ত্রেুতা এবং নামীদামি ব্র্যান্ডগুলো পোশাক তৈরির জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়। তবে গবেষণা, ডিজাইনসহ অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছেয়ে। এসব বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে পোশাক খাতেকে সবচেয়ে দক্ষ এবং পূর্নাঙ্গ সমাধানদাতা হিসেবে নিজেদের পরিচিতি আরো বৃদ্ধি করতে হবে। এ বিষয়ে সভায় বিজেএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশ মূলত টি-শার্ট, শার্ট, সোয়েটার, জ্যাকেট, এবং ট্রাউজার- এই পাঁচ ধরনের পণ্য তৈরির উপর নির্ভরশীল। যা তৈরি পোশাক খাতের মোট রপ্তানির প্রায় ৭৯ শতাংশ। বাংলাদেশকে এখন ক্রীড়া পোশাক, স্যুটসহ উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরি করতে হবে। নানা রকম পণ্যে বৈচিত্রকরণের জোর দিতে হবে। মূল প্রবন্ধে সিইবিএআই-য়ের পরিচালক রেজাউল হাসনাত ডেভিড বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের গবেষণা এবং উন্নয়ন এখন পর্যন্ত বিদেশি গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল। তাদের নির্দেশনা অনেক সময় দেশীয় উদ্যোক্তাদের ভুল পথেও নিয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ তারা সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে নিজেরাই জানেন না। এমনকি কোন কোন বিষয় বুঝতেও পারে না। আর এ কারণেই তৈরি পোশাক খাতে নিজস্ব গবেষক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান জরুরি। আইএলও, সিআইডিএ ও এইচএন্ডএমের সহায়তায় তৈরি প্রতিষ্ঠান সিইবিএআই বাংলাদেশে সে কাজটি করে যাচ্ছে।
ব্যবসা অধ্যয়ন অনুষদের ডীন প্রফেসর শিবলী রোবায়েত বলেন, ৫০ বিলিয়ন রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপায় নির্ধারণের জন্য বিজিএমইএ-কেই গবেষণ করতে হবে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য এখন একটি আলাদা মন্ত্রণালয় প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। রাবাব গ্রুপের চেয়ারম্যান এম আইয়ুব বলেন, গত কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধি বিশ্লেষণ করলে মনে হয় ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। তবে বাস্তবতা অনেক দূরে। যা সত্যি হতাশাজনক। কারণ, অবকাঠামো, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে এখনো ইমেজ সংকট রয়েছে। এসব উত্তরণে সকল অংশীদারদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সিইএবিআই সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, পোশাক খাতে বাংলাদেশ অনেক ভাল কাজ করলেও এর কোন ব্র্যান্ডিং হচ্ছে না। এখনো পোশাক খাতের বাংলাদেশ মানে রানা প্লাজা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এজন্য ব্র্যান্ডিং করে বুঝাতে হবে বাংলাদেশ মানেই রানা প্লাজা নয়। এর জন্য দক্ষ জনশক্তি, নায্য মূল্যে জমি, অবিচ্ছিন্ন জ্বালানী, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো এবং স্থিতিশীল রাজনীতি অত্যন্ত জরুরি। সিইএবিআই পরিচালক এবং বিজিএমইএ-র সাবেক সহসভাপতি শাহিদুল্লাহ আজিম বলেন, শুধু শ্রমিকদেরকে নয়, উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে তৈরি পোশাক খাতের সকল পর্যায়ের জনশক্তিকেই প্রশিক্ষিত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের ফ্যাশন আমাদেরকেই সৃষ্টি করতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.