মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে তিন কারণে বন্যপ্রাণির লোকালয়ে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে পাহাড়ি এলাকার সড়ক ও রেলপথে প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণির মৃত্যুর অহরহ ঘটনা ঘটেছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কমপক্ষে ১০টি মায়া হরিণ লোকালয়ে ধরা পড়ে। এর মধ্যে রেলপথে ও সড়ক পথে ৪টি মায়া হরিণ, গুইসাপ, দাঁড়াশ সাপ, বেন্ডেড ক্রেইট, ব্যাঙ, লিজার্ড, সবুজবরা সাপ, গন্ধগোকুল, গোল্ডেন জ্যাকেল, সিভিট, পেরিস ল্যাংঙ্গুর মোট ৪০টি বন্যপ্রাণি মারা গেছে বলেও শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি গবেষণা কাজে নিয়োজিত একটি দল গত চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে এক পরিসংখ্যান প্রদান করেন। ওই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে গোল্ডেন জ্যাকেল ১টি, ক্রিকেট ফ্রগ ২৫টি, ইসমিথ লিটিল ফ্রগ ২টি, মাইক্রো হাইলিফ ফ্রগ ৯টি, আনআইডেনটিফাইড ফ্রগ ১৩টি, চিকাল কিলব্যাক ৩টি, ব্লাকক্রেইট ১টি, বেন্ডেড ক্রেইট ১টিসহ মোট ৫৫ বন্যপ্রাণি মারা যায়। একই বছরের অক্টোবর মাসে মোট ৪৪টি মারা যায়। এর মধ্যে ছিল ক্রিকেট ফ্রগ ১৫টি, ইসমিথ লিটিল ফ্রগ ৪টি, মাইক্রো হাইলিফ ফ্রগ ১০টি, কপস ফ্রগ ৬টি, কমনট্রি ফ্রগ ৩টি, আনআইডেনটিফাইড ফ্রগ ৬টি। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পাইথন প্রজেক্টের বন্যপ্রাণি গবেষক শাহরিয়ার সিজার সম্প্রতি তার এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, লাউয়াছড়া বনে সড়ক ও রেল দুর্ঘটনায় প্রতিমাসে ৪৫টি করে বন্যপ্রাণি মারা যাচ্ছে। বন্যপ্রাণিদের এ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু থেকে বাঁচাতে ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণির নিরাপত্তার কথা ভেবে বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জাতীয় উদ্যানের ভিতরের ভানুগাছ- কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল প্রধান সড়কটিও বিকল্প জায়গায় স্থানান্তর করার প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন বিভাগে প্রেরণ করেছে। একই সঙ্গে জাতীয় উদ্যানের ভিতরের রেলপথও স্থানান্তর করা নিয়েও পরিবেশবাদীরা সরকারের উচ্চমহলে জোর দাবি তুলেছেন। সর্বশেষ গত ৮ই ভোর ছয়টায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরের রেলগেট এলাকায় দ্রুতগামী একটি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে একটি মায়া হরিণ। একই সময় আবার মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি চশমা হনুমানও মারা যায়। এ দুটি প্রাণিই বিরল প্রজাতির। বন বিভাগের (বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) সহকারী বিভাগীয় বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার ভোরে জাতীয় উদ্যানের রেলগেট এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে একটি মায়া হরিণ এবং কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে একটি চশমা হনুমানের মৃত্যু হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.