নিউজিল্যান্ডে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচটিতে কাল হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচে হারজিত অবশ্য মুখ্য নয়। কাঙ্ক্ষিত সমন্বয় অনুযায়ী নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর যখন জানা যাবে, ওয়াঙ্গারেইয়ের কোবহাম ওভালে বাংলাদেশ ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে হেরেছে ৩ উইকেটে, তখন ফলটাকে খারাপ মনে হবে না। এ ম্যাচে বাংলাদেশের আরেকটি প্রাপ্তি, মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিং। ছয় মাস পর ম্যাচ খেলে ভালোই করেছেন বাঁহাতি পেসার। অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে জুটি বেঁধে নতুন বলে বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ। নিজের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছেন ওপেনার রায়ান ডাফিকে। ‘ফিজে’র প্রথম স্পেলটাই হয়েছে দুর্দান্ত—৪ ওভারে ১৫ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। তবে দ্বিতীয় স্পেলে একটু খরুচে ছিলেন, ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। ৩৬তম ওভারে হেনরি শিপলি পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরেছেন মোস্তাফিজকে। ওই ওভারে মোক্ষম অস্ত্র ‘কাটার’ দিয়ে এই কিউই ব্যাটসম্যানকে দ্বিতীয় শিকার বানিয়েছেন বাঁহাতি পেসার। ৭ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে মোস্তাফিজ নিয়েছেন ২ উইকেট। কাঁধের চোট কাটিয়ে ফেরা মোস্তাফিজ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য ফিট হয়ে উঠেছেন কি না, কাল সেটি পর্যবেক্ষণ করেছেন নির্বাচকেরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন মনে করছেন মোস্তাফিজ অনেকটাই প্রস্তুত, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল তাকে ৭ ওভার বোলিং করানো। সেটি সে ভালোভাবেই করেছে। কাল (আজ) যদি ব্যথা না থাকে প্রথম ওয়ানডেতেই হয়তো সে থাকবে।’ ম্যাচের আগে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তাতে শুরুটা পিছিয়ে যায় আধঘণ্টা। বাংলাদেশ ইনিংসের ১১তম ওভারে আবারও বৃষ্টির উপদ্রব। ঘণ্টা খানেক বন্ধ থাকার পর খেলা ফের শুরু হলে ম্যাচ নেমে আসে ৪৩ ওভারে। ৭ রানে ওপেনার তামিম ইকবাল আউট হলেও দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য সরকার-ইমরুল কায়েসের ৫৫ রানের জুটিতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সৌম্যের ব্যাটিংয়ে পাওয়া গেছে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত—শিপলির বলে আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে করে গেছেন ৪০ রান, তাতে চার মেরেছেন ৪টি। ব্যাট কথা বলেছে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকেরও। ৪৩ রানে অবসর নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ আর আজাজ প্যাটেলকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ৪৫ রানে ক্যাচ দিয়েছেন মুশফিক। ওভারপ্রতি প্রায় ৬-এর কাছাকাছি রান তুলে ৮ উইকেটে ২৪৫—বাংলাদেশের স্কোরটা খারাপ ছিল না। ২৪৬ রান তাড়া করতে নেমে ৬ রানে ওপেনার ডাফি আউট হলেও দ্বিতীয় উইকেটে বেন স্মিথ-ভারত পপলির ৮৮ রানের জুটি পথ দেখায় নিউজিল্যান্ড একাদশকে। কিন্তু এরপরই সাকিবের বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ১ উইকেটে ৯৪ থেকে দ্রুতই ৫ উইকেটে ১২৮ রানে পরিণত হয় স্বাগতিক দল। ৩৪ রানের মধ্যে কিউইদের যে ৪ উইকেট পড়েছে তিনটিই নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ২৯.২ ওভারে শন হিকসকে যখন মাহমুদউল্লাহ ফেরান, নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ৮২ বলে ৯১ রান, হাতে ৪ উইকেট। হর্ন (৬০*), ব্রেট হ্যাম্পটন (২৯*) ও শিপলির (২৪) ব্যাটিংয়ে সমীকরণটা তারা শেষমেশ মিলিয়ে ফেলে। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং নিয়ে তৃপ্তি আছে মিনহাজুলের। তবে প্রধান নির্বাচক বোলিংয়ে দেখছেন অনেক উন্নতির জায়গা, ‘ব্যাটিং ভালো হয়েছে। তবে উইকেটে বোলারদের আরেকটু মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার আছে। আশা করি, সময়মতো সব ঠিক হয়ে যাবে।’ নিউজিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল ওয়াঙ্গারেইতে তিন দিনের অনুশীলন শেষে আজ সকালে বাংলাদেশ দল চলে যাবে দক্ষিণের ক্রাইস্টচার্চে। সেখানেই প্রথম ওয়ানডে ২৬ ডিসেম্বর। সংক্ষিপ্ত স্কোর বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ২৪৫/৮ (তামিম ১, ইমরুল ৩৬, সৌম্য ৪০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, সাকিব ২৩, মুশফিক ৪৫, সাব্বির ১১, তানভীর ১০, মাশরাফি ২১*, মিরাজ ৩, তাসকিন ১*; হিকস ২/৩০, হ্যাম্পটন ২/৪৪)। নিউজিল্যান্ড একাদশ (লক্ষ্য ৪৩ ওভারে ২৪৫): ৪১.৪ ওভারে ২৪৭/৭ (হর্ন ৬০*, স্মিথ ৫০, পপলি ৪৫, হ্যাম্পটন ২৯*; মাশরাফি ০/২৯, মোস্তাফিজ ২/৩৯, রুবেল ০/২৯, তানভীর ০/৫৯, তাসকিন ০/১৯, সাকিব ৩/৪১, মিরাজ ০/১২, মাহমুদউল্লাহ ১/১৪)।
ফল: নিউজিল্যান্ড একাদশ ৩ উইকেটে জয়ী (ডি/এল)।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.