বর্তমানে অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে অনলাইনে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সাইটে তৎপর থাকেন। এর শুরুটা হয় সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ফােনের স্ক্রিন দেখার মাধ্যমে। এরপর বাসা, কর্মস্থল বা চলতি পথে দিনের বড় একটা সময় কাটে কম্পিউটার, টেলিভিশনসহ অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
আর এর শেষও হয় সেই মোবাইল স্ক্রিন দেখে ঘুমাতে যাওয়ায়। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল ও কুফল উভয়ই আছে। তবে অনেক সময় অসতর্ক ব্যবহারের কারণে তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আধুনিক জীবন-যাপনের তাগিদে আমাদের প্রযুক্তিপ্রেম থাকা ভালো। তবে এর প্রতি অন্ধ ভালোবাসা ভালো নয়। কারণ এটা শেষপর্যন্ত প্রযুক্তি আসক্তিতে রূপ নেয়।
স্বাস্থ্য বিষয়ক মার্কিন ম্যাগাজিন নেলসন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১৮ বছর বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা দিনে অন্তত ১১ ঘণ্টা কোনো না কোনো স্ক্রিনের সামনে থাকে। কিন্তু এই চাপ নেয়া চোখের জন্য সহজ ব্যাপার না। যার কারণে চোখের সমস্যাসহ নানা রকম রোগে ভুগছে মানুষ।
সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানরাই এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। এক জরিপে দেখা গেছে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঘাড়, কাঁধ এবং পিঠে ব্যথায় ভুগছে ৩৬ শতাংশ, চোখের পীড়ায় ৩৫ শতাংশ, মাথাব্যথা ২৫ শতাংশ, ঝাপসা দৃষ্টি ২৫ শতাংশ এবং শুষ্ক চোখ ২৪ শতাংশ।
সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে বড় অংশই তরুণ। এছাড়া ৩০ বছরের কম বয়সী ৭৩ শতাংশ মানুষ এই উপসর্গগুলো অনুভব করছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, উন্নত এবং উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশেই অবস্থা এই রকম।
সুতরাং উপরোক্ত পরিস্থিতি হতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের অবশ্যই সতর্ক হইতে হবে। বিশেষত তরুণদের।
এই ধকল থেকে চোখকে রক্ষা করতে রাস্তা বাতলে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এজন্য কিছু ব্যায়াম করতে হবে। যেমন- বাঁ বা ডানে তাকানোর ব্যায়ামটি চোখের পেশির ওপর চাপ ফেলে তা শক্তিশালী করে এবং চোখের অনুভূমিক ও উল্লম্ব দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যায়াম করতে সোজা হয়ে আরাম করে বসতে হবে। মাথা না নড়িয়ে যত দূর সম্ভব বাঁ দিকে তাকানোর চেষ্টা করতে হবে। বাঁ দিকের কোনো বস্তুর ওপর পাঁচ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। এবার চোখ স্বাভাবিক করে কয়েকবার পলক ফেলুন। একই প্রক্রিয়া ডান দিকে অনুসরণ করুন।
যারা বেশি সময় কম্পিউটারের সামনে থাকে, তাদের জন্য চোখের প্রশান্তির ব্যায়ামটি অধিক কার্যকর। চাপ কমাতে যখনই সুযোগ হয় ব্যায়ামটি করা ভালো। আরাম করে বসে কয়েকবার দীর্ঘ শ্বাস নেয়া। টেবিল বা ডেস্কে কনুইয়ে হেলান দেয়া। পারলে কনুইয়ের নিচে নরম কিছু রাখা। দুহাতের তালু আস্তে আস্তে ঘষে কিছুটা উষ্ণ করা।
ধকল কাটাতে চোখের হালকা ম্যাসাজের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎকরা। চোখের হালকা ম্যাসাজ রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে চোখের ধকল দূর করতে পারে। চোখের অশ্রুনালির কাছে হালকা চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করলে চোখের আর্দ্রতা বাড়ে এবং চোখের প্রশান্তি দেয়। এ ধরনের ব্যায়াম করতে চোখের পাতার ওপর মৃদুভাবে তিন আঙুল দিয়ে চক্রাকারে ম্যাসাজ করতে হয়। ১০ বার ঘড়ির কাঁটার দিকে ও ১০ বার বিপরীত দিকে এ ম্যাসাজ করা যায়। করুন। চোখের দুই পাতার মাঝখানে তিনবার ম্যাসাজ করতে হয়।
এছাড়া কম্পিউটারে কাজ করার সময় এক ঘণ্টাকে তিনভাগে ভাগ করে (২০-২০-২০)২০ সেকেন্ডের বিরতি নেয়া এবং এই সময় অন্তত কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে ২০ ফুট দূরে গিয়ে আবার ফিরে আসা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.