যে সম্ভাবনাটার কথা বেশ জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে, সেটার সঙ্গে দৃশ্যটা মিলল না। হ্যাগলি ওভালের উইকেটের পাশে মুশফিকুর রহিম ও চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে মুশফিকের খেলার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানিয়েছেন ফিজিও ডিন কনওয়ে। এখন পর্যন্ত তাঁর কথার বিপরীত কিছু শোনা যায়নি। তবু মুশফিক মাঝমাঠে কেন?
না খেললে কোচের সঙ্গে সলাপরামর্শ করা যাবে না বা উইকেট দেখতে যাওয়া যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। মুশফিক বলেই খটকাটা লাগল। ওয়েলিংটনে আঙুলের চিড় নিয়েও যিনি ব্যাটিং করতে নেমে গিয়েছিলেন, ক্রাইস্টচার্চে সেই মুশফিক আবার কোনো চমক দেখাবেন না তো!
দ্বিতীয় টেস্টের একাদশ কী হবে, তার অনেক কিছুই নির্ভর করছে মুশফিকের সিদ্ধান্তের ওপর। অবশ্য সব অনিশ্চয়তাই দূর হয়ে যাওয়ার কথা আজ। কাল থেকে শুরু দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিক, ইমরুল কায়েস খেলছেন কি না, না খেললে পরিবর্তে কারা খেলবেন—সবই। এই সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে সঙ্গে দুঃস্বপ্নের ওয়েলিংটন টেস্টটাকেও ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ দল। ক্রাইস্টচার্চে নতুন পরীক্ষা। তার আগের দিন আর পেছন ফিরে না তাকানোই ভালো। তাকালেও সেটা শুধু ওই টেস্টের প্রথম চারটি দিনের দিকেই। হ্যাগলি ওভালে কাল হাথুরুসিংহেও সেটাই জানালেন, ‘গত ম্যাচ থেকে আমরা অনেক ইতিবাচক বিষয় নিতে পারি। চতুর্থ দিনের শেষ দেড় ঘণ্টার আগ পর্যন্ত আমরাই এগিয়ে ছিলাম। যেভাবে আমরা প্রথম টেস্টটা খেলেছি সেভাবেই দ্বিতীয় টেস্টও খেলব।’
প্রথম টেস্টের ইতিবাচকতা মূলত প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়েই। ক্রাইস্টচার্চেও বেসিন রিজার্ভের কন্ডিশন পেলে সেটা এখানেও ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন কোচ। আসলে প্রথম টেস্টের চার দিন পর্যন্ত সবই ধরে রেখে হাথুরুসিংহে বদলে ফেলতে চান শুধু শেষটা, ‘আগে ব্যাটিং পেলে আমরা একই জিনিস আবার করতে চাইব এবং গত ম্যাচের চেয়ে আরও ভালোভাবে শেষ করতে চেষ্টা করব ম্যাচটা।’
আরও নির্দিষ্ট করে বললে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংটাই বদলাতে চান কোচ। প্রথম ইনিংসে প্রায় ছয় শ রান করে ৫৬ রানের লিড নেওয়ার পরও শেষ দিনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার যে ওটাই কারণ ছিল! তবে ওই বিপর্যয়ের জন্য নির্দিষ্ট কাউকে দায় দিতে রাজি নন কোচ, ‘এটা পুরো ব্যাটিং গ্রুপেরই ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা ভালো ব্যাট করিনি। তাদের মাথায় কী কাজ করছিল আমি আসলে জানি না।’ প্রথম ইনিংসে সবাই যেভাবে ব্যাট করেছিল তার সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংকে মেলাতেই পারছেন না কোচ। তবে মাঝের এই কদিন সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর ক্রাইস্টচার্চে আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই বিশ্বাস হাথুরুসিংহের।
কিন্তু নিল ওয়াগনার-টিম সাউদিরা যদি আগের ম্যাচের মতো বাউন্সারের ফণা তোলেন এখানেও? না, বাউন্সার-শর্ট বলকে কোনো ভয় নেই বাংলাদেশ কোচের। কিউই ফাস্ট বোলারদের এ রকম আগ্রাসী মনোভাবে বাড়াবাড়িরও কিছু দেখছেন না তিনি, ‘আমরাও তো এটাই করেছি। আক্রমণাত্মক বোলিং করেছি। কামরুলের ওই ওভারের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ওটাই টেস্ট ক্রিকেট, আসল টেস্ট ক্রিকেট। লড়াইটা আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে এবং আমাদের এটাই করে যাওয়া উচিত।’ আহত শরীর নিয়েও মুশফিক, ইমরুল সে ম্যাচে যে রকম লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়েছেন, হাথুরুসিংহে অভিভূত তাতেও, ‘একবার স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ার পর ইমরুলের ব্যাট করতে নামা, বুড়ো আঙুলের চোট নিয়েও মুশফিকের ব্যাটিং করার সাহস দেখানো, এগুলো প্রমাণ করে তারা দেশের জন্য কতটা নিবেদিতপ্রাণ।’
ক্রাইস্টচার্চে দলের সবার কাছ থেকেই এই নিবেদনটা চাইবেন হাথুরুসিংহে। সম্ভাব্য সাফল্যের যে ছবি তিনি কল্পনায় আঁকছেন, তার প্রেক্ষাপট তৈরি হতে হবে তা দিয়েই। ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সে ছবিতে তিনি জোড়া লাগাচ্ছেন গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতে পাওয়া আত্মবিশ্বাসটাকে। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে হারের পর ঢাকায় ১০৮ রানের বিশাল জয় দিয়ে সিরিজ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। কোচকে সাহস জোগাচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর সেই স্মৃতি।
কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে হ্যাগলি ওভালে উড়িয়ে আনতে একটা বাধাও আছে—ক্রাইস্টচার্চের আবহাওয়া। কাল রাতে যে পরিমাণ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর কনকনে হাওয়া বয়ে গেছে শহরের ওপর দিয়ে, টেস্টের দিনগুলোয় সেটা থাকলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য মাঠে ঠিকভাবে দাঁড়ানোটাই কষ্টকর হবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস কিন্তু সেই কষ্টকর সময়েরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.