রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় সারা বছরই গ্যাসের সমস্যা। কিন্তু প্রায় ১৫ দিন ধরে এই সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। দিনের বেলায় বেশির ভাগ সময় চুলা জ্বলছে না। গভীর রাতে গ্যাস আসে। শীতের মধ্যে ভোররাতে রান্না করতে হয়। গতকাল শুক্রবার এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া যায়। গেন্ডারিয়ার বাগিচা এলাকার বাসিন্দা ও কাঠের ব্যবসায়ী মো. আসলাম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, কাছেই তাঁর বাসা কিন্তু দুপুরে খেতে যান না। কারণ, গ্যাসের অভাবে দুপুরে প্রায়ই রান্না হয় না। মাঝে মাঝে তিনি হোটেল থেকে খাবার নিয়ে বাসায় ফেরেন। বাসায় গিয়ে দেখেন, এক কাপ চা গরম করার মতো আঁচও চুলায় নেই। বসালে ঘণ্টা গড়িয়ে যায়, পানি গরম হয় না। একই এলাকার বাসিন্দা একটি পাঁচতলা ভবনের মালিক আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের স্বল্পচাপ সমস্যা থাকেই। কিন্তু শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার পর গ্যাস দিনের বেলায় প্রায় থাকে না। বাড়ির ভাড়াটেরা গ্যাস সমস্যার নিয়মিত অভিযোগ জানালেও তাঁর করার কিছু নেই। তিনি তো আলাদা করে গ্যাসের বিল নেন না। সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে নতুন রাস্তা। সেখানে এস কে দাস রোডের অনেক বাড়িতে ভোররাতে রান্না হয়। সকাল ছয়টার দিকে গ্যাস চলে যায়। একটি ভবনের গৃহিণী মমতা রানী বলেন, বেলা তিনটার পর চুলায় যে আঁচ আসে, সে আঁচে রান্না সম্ভব নয়। শীতের মধ্যে প্রতিদিন ভোর চারটায় উঠে রান্না করতে করতে বিরক্ত ধরে গেছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘প্রতিবছরই এ ধরনের সমস্যা কেন হচ্ছে?’ এ ধরনের প্রশ্ন সতীশ সরকার লেন, রজনী চৌধুরী লেন, শশীভূষণ চ্যাটার্জি রোডসহ আশপাশের মহল্লার বাসিন্দাদেরও। শশীভূষণ চ্যাটার্জি রোডে একাধিক ভাতের হোটেলে সিলিন্ডারে রান্না হয়। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও সেখানে ভিড় করেছেন অনেক বাসাবাড়ির লোকজন। দুপুরের খাবার খেতে হলে বিকেল গড়িয়ে যাবে। কারণ চুলায় ভালো আঁচ আসে তিনটার পর। একটি হোটেলের কর্মচারী সবুর আলী বলেন, গত বছরও শীতের মৌসুমে এভাবে রান্না করতে হয়েছে। এবার শীত শুরুর পর থেকেই রান্না হচ্ছে সিলিন্ডারে। সিলিন্ডারে রান্নার কারণে তাঁদের খরচ বেশি হচ্ছে, তাই প্রতি খাবারের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন। রজনী চৌধুরী লেনের ফল বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, গ্যাসের স্বল্পচাপ সমস্যা দূর করতে গত বছর আলাদা লাইন করা হয়েছে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জরুরি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক সেলিম মিয়া বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসের সংকট দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলির প্রান্তসীমার বাড়িগুলোতে (পকেট এলাকায়) সাধারণত গ্যাসের স্বল্পচাপ থাকছে। মতিঝিল জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বলা হয়, গেন্ডারিয়াসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। পাইপ ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যা হলে তিতাস থেকে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.