কারাগারে ১৪ বছর ধরে বন্দী দণ্ডিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াসিন খান ওরফে কাইল্যা পলাশ তাঁর রামপুরার বাসায় মাঝেমধ্যেই আসা-যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই দণ্ডিত অপরাধীকে আদালতে আনা-নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত ৩০৫ জন কারা ও পুলিশ সদস্যের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, তাঁদের ২৯৪ জন পুলিশ সদস্য, বাকি ১১ জন কারারক্ষী। তবে গত ৬ নভেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শক ও কারা মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি পাঠানো হলেও এখনো কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যুবদলের নেতা মিজানুর রহমান মিজান হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন ইয়াসিন খান। ২০০২ সালের ২৯ মে রামপুরায় যুবদলের নেতা মিজানকে গুলি করে হত্যার মামলায় বিচারিক আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। উচ্চ আদালত তাঁর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। গত ১৪ বছরে ইয়াসিন খান বিভিন্ন কারাগারে ১৯ বার বদলি হয়েছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তাঁর চার বছর বয়সী একটি সন্তান আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি প্রায় এক বছর তদন্ত করে গত ৩১ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দেওয়ার নামে ইয়াসিন খানকে তাঁর রামপুরার বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া ও অবস্থান করার ‘অবৈধ সুবিধা’ পাইয়ে দেওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও কারারক্ষীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবার বাসায় যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পুলিশ সদস্যদের একেকজনকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হতো। তদন্ত কমিটির কাছে দেওয়া লিখিত জবানবন্দিতে ইয়াসিন খান স্বীকার করেছেন, ২০১২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলা হাসপাতালে স্ত্রীর সঙ্গে থেকেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এই তদন্ত প্রতিবেদন তিনি পেয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, সেটাও জানাতে বলেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো পালন করা হবে। ঢাকার কারা মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চিঠি পেয়েছেন। এ ঘটনায় যাঁদের দায়ী করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেছেন। তবে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ কী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একজন আসামি যদি নির্দোষ মানুষের মতো স্বাধীন জীবন যাপনের সুযোগ পায়, তবে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো কী দরকার! আসামি কাইল্যা পলাশের বেআইনি সুযোগ পাওয়ার ঘটনা আলাদা বিষয় বলে মনে হয় না। এমন অবৈধ সুবিধা অন্য আরও অনেক ধনী সন্ত্রাসী আসামি উপভোগ করছে।’ কমিটির করা সুপারিশে বলা হয়েছে, কারাগারের যে স্থান থেকে আসামি আনা-নেওয়া করা হয়, সেখানে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। কারাগার থেকে আসামির বাইরে যাওয়া এবং ফিরে আসার প্রিজন ভ্যান পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া কারাগারের ডায়েরিতে তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। প্রিজন ভ্যানের নিরাপত্তার জন্য পেছনে আরেকটি গাড়ি রাখতে হবে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা বলেন, তাঁরা অবশ্যই অনেক বড় অপরাধ করেছেন। একটি ঘটনায় বোঝা যায় বন্দীরা কত সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের শাস্তির বিষয়ে সাবেক আইজি বলেন, বন্দীকে সহায়তা এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় মামলা করা যাবে। সর্বোপরি সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে মামলা করা যাবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.