কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে একাধিক চক্র জাল নোট তৈরি ও তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে
পাবনার সুজানগর উপজেলার চরতারপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন খান গরু এনেছেন রাজধানীর আফতাবনগরের পশুর হাটে। একটি-দুটি নয়, তিনিসহ ছয়জন ব্যাপারী একসঙ্গে ৬০টি গরু তুলেছেন হাটে। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বললেন, কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে প্রত্যেকবারই জাল নোট তৈরি চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবারও একইভাবে চক্রগুলো বাজারে ছড়িয়েছে জাল নোট। জাল নোট নিয়ে আতংকে রয়েছেন তিনিসহ গরু ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বিভিন্ন বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরাও জাল নোট আতংকে ভুগছেন। কারণ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে একাধিক চক্র জাল নোট তৈরি ও তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে চক্রগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক কোটি টাকার জাল নোট ছেড়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও জাল নোট কারবারিতে সদস্য করা হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের নিয়ে জাল নোট এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বহন করা হয়। জাল টাকার প্রতারণার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। আইনশৃংখলা বাহিনীর সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, ঢাকায় জাল নোট তৈরির ১০-১২টি চক্র রয়েছে। ঢাকার বাইরেও তাদের সদস্য রয়েছে। সাধারণত চক্রের প্রধানরা ঢাকাতেই জাল নোট তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রতিটি চক্রের সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ১০ জন। অবশ্য জাল নোট তৈরি চক্রকে ধরতে তৎপর রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। সম্প্রতি কয়েকটি চক্রকে জাল নোটসহ গ্রেফতারও করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর চক্রের সদস্যরা জাল নোট তৈরি ও বাজারে ছড়িয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে। বুধবার রামপুরা থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় জাল টাকার টাঁকশালের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। জাল টাকা ব্যবসায়ী চক্রের ৫ সদস্য আটক ও বিপুল পরিমাণে জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে এই চক্র ইতিমধ্যে কোটি টাকার বেশি জাল নোট বাজারজাত করেছে এবং আরও ২ কোটি টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হয় জাল নোট তৈরি চক্রের আট সদস্য। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবির পশ্চিম বিভাগের টিম। ডিবির উপপুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জাল নোট চক্রের কয়েকটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তরে জাল নোট প্রস্তুত করা হয়। ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার জাল নোট বেশি তৈরি করে এই চক্র। উৎপাদনকারী প্রথম স্তর। এই স্তর দ্বিতীয় স্তরের লোকজন উৎপাদনকারীর কাছ থেকে এক লাখ টাকার জাল নোট আসল ৮-১০ হাজার টাকা দিয়ে কেনে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠায় দ্বিতীয় স্তরের লোকজন। দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় তৃতীয় স্তরের সদস্যদের কাছে ওই এক লাখ জাল নোট ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.