ঢাকা-সিলেট রুটে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে অব্যবস্থাপনায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। টিকিটবিহীন যাত্রীদের চাপে বসার জায়গা পান না টিকিটধারী যাত্রীরা। তার ওপর কালনী এক্সপ্রেসে ডাকাতির ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওই রুটে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা এসব অভিযোগ করেন। পারাবত এক্সপ্রেসের কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, গত ২৪শে অক্টোবর বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে পারাবত এক্সপ্রেস মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এর ১৬টি বগিতে আসন ৯৬০টি। এ সময় অনেক যাত্রী বিভিন্ন কোচে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন। ট্রেনটি যখন আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়, তখন যাত্রীসংখ্যা বেড়ে যায়। তখন পুরো ট্রেনটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন টিকিট ও আসনবিহীন যাত্রী। এতে পুরো ট্রেনে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। টিকিটবিহীন যাত্রীরা কোথাও বসার জায়গা না পেয়ে ট্রেনের নামাজের ঘর ওযুখানায় বসে ও বাথ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে ফিরতে দেখা গেছে। শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের যাত্রীদের নির্ধারিত এসি কোচ ‘ঙ’ এ কোচের ৩৮-৩৯ নাম্বার আসনের কোনো টিকিট বিক্রি না হলেও ট্রেনের ওই কোচের এটেনডেনসের সহায়তায় উপরি লেনদেনের মাধ্যমে ওই দুই আসনের যাত্রীরা শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে বিমানবন্দর স্টেশনে নামেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই যাত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, এটেনডেনসকে কিছু বকশিশ দিয়ে এসি কোচে বসে ছিলেন। এভাবে ৩৬-৩৭ নাম্বার আসনে ও এর আশপাশের ২০-২২টি আসনে এসি টিকিটবিহীন যাত্রীদের দেখা মেলে। ট্রেনটি যখন আখাউড়া স্টেশনে থামে তখন এসি টিকিটের যাত্রী ট্রেনে উঠে দেখেন তার আসনে একজন নারী ছেলে সন্তান নিয়ে বসা। তাঁরা সিলেট থেকে আসছিলেন। ওই আসনের যাত্রী ছিলেন পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা। তাঁর আসনে এটেনডেনসকে উপরি টাকা দিয়ে বসা যাত্রীরা ওই কর্মকর্তার সঙ্গে বচসা শুরু করেন। তখন এটেনডেন্স দৌড়ে এগিয়ে এসে টিকিটবিহীন যাত্রীদের জোর করে তুলে দেন। এ সময় ওই যাত্রীরা টাকা দেয়ার পরও কেন তুলে দিচ্ছেন এ নিয়ে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এর পর ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে এসে পৌঁছানোর পর একই কোচে ঢাকায় যাবার উদ্দেশে দুই ছাত্র ট্রেনে উঠে দেখেন তাদের আসনে দুজন টিকিটবিহীন যাত্রী বসা। প্রথমে তারা এই দুই আসন ছাড়তে বললেও তারা স্বেচ্ছায় উঠতে চাননি। পরে এটেনডেন্স এগিয়ে এসে তাদের জোর করে তুলে দেন। এ সময় টিকিটবিহীন যাত্রীদের সাথে এটেনডেন্সের কথাকাটাটি শুরু হলে ওই দুই ইউনিভার্সিটির ছাত্রের হাতাহাতির রূপ নেয়। এ সময় এগিয়ে আসেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। তিনি এটেনডেন্সকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, আসনের বিপরীতে অতিরিক্ত স্ট্যান্ডিং (দাঁড়ানো) টিকিট বিক্রি ও টিকিটবিহীন যাত্রীদের কারণে এ রুটে চলাচলকারী রেলযাত্রীদের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে তাঁরা এ রুটের মাঝামাঝি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাত্রাবিরতি বন্ধের দাবি জানান। অপর যাত্রী আবদুস সোহবান বলেন, সিলেট থেকে ঢাকাগামী পারাবত ট্রেনটি যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া ও ভৈরব স্টেশনে যাওয়া ও আসার সময় যাত্রাবিরতি দেয়, তখন একইভাবে আসনবিহীন টিকিটের যাত্রী ওঠে পড়েন। এ স্টেশনে পৌঁছার আগ পর্যন্ত পুরো ট্রেনে স্বাভাবিক পরিবেশ থাকে। তাঁর দাবি, এসব স্থানে যাত্রাবিরতি বন্ধ না হলে পারাবত ট্রেনের যাত্রীদের দুর্ভোগ থেকেই যাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. আরিফুজ্জামান আসনবিহীন টিকিট বিক্রির বিষয়টি স্বীকৃত বলে মানবজমিনকে বলেন, টেনে অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি হওয়া উচিত নয়। বিষয়টি তিনি তদন্ত পূর্ব্বক ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে ডাকাতেরা উঠে যাত্রীদের নগদ টাকা ও মুঠোফোন লুট করে পালিয়ে যাবার ঘটনায় আন্তঃনগর ট্রেনগুলির যাত্রীদের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে মৌলভীবাজারের টিলাগাঁও ও লংলা রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে এ ঘটনা ঘটে। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার পুলিশ ও শমশেরনগর স্টেশন সূত্র জানায়, সোমবার বিকাল চারটায় ঢাকার কমলাপুর থেকে সিলেটের উদ্দেশে কালনি এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে আসে। ট্রেনটির ইঞ্জিনের ঠিক পেছনে একটি অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত করা হয়। এটির সঙ্গে ট্রেনের অন্য বগিগুলোর যোগাযোগের পথ ছিল না। রাত ১০টার দিকে ট্রেনটি শমশেরনগর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার সময় বগিটিতে চারজনের এক ডাকাত দল ওঠে। ডাকাতেরা ১০-১২ জন যাত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা ও মুঠোফোন লুট করে নিয়ে কুলাউড়া স্টেশনের আউটার সিগন্যাল এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে যায়। কুলাউড়ার স্টেশন মাস্টার মো. মুহিবুর রহমান বলেন, বগিটিতে ট্রেনের রেল-পুলিশ ও কর্মচারীর চলাচল করার সুযোগ থাকলে এ ঘটনা ঘটত না। ডাকাতির প্রসঙ্গে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, সম্ভবত শমসের নগর স্টেশন থেকে যাত্রীবেশে ডাকাতরা ট্রেনে উঠে টিলাগাঁও ও লংলা স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় ১০/১২ জন যাত্রীর কাছ থেকে ভীতি ছড়িয়ে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুট করে স্টেশন এলাকায় ধীরগতিতে চলা ওই ট্রেন থেকে ডাকাতরা নেমে যায়। কুলাউড়া, সিলেটসহ ঢাকার যাত্রী ছিলেন। এসব যাত্রীদের চলন্ত ট্রেনে চলাচলের রাস্তা না থাকায় পুলিশ ডাকাতি প্রতিরোধ করতে পারেনি। তবে এ ঘটনায় দস্যুতার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত ও অজ্ঞাতনামা ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। যাত্রীদের কেউ বাদী না হওয়া রেলওয়ে থানার এএসআই সাইফুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলা রজু করেন। ওসি বলেন, এ ঘটনায় ট্রেন যাত্রীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ঘটনার পর পরই পুলিশের পক্ষ থেকে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে সাদা পোশাকে ও পোশাকে পুলিশের টহল ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.