ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার কোথায় কী ধরনের বিলবোর্ড স্থাপন করা যাবে, সে বিষয়ে গত বছরের শেষ দিকে একটি খসড়া নীতিমালা করা হয়। বছর পেরোলেও খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়নি। বরং ডিএনসিসি নতুন করে আরেকটি খসড়া প্রণয়ন করছে বলে জানা গেছে। এদিকে ডিএনসিসি এলাকার সড়ক বিভাজক, সড়কদ্বীপ, উড়ালসড়ক মিলিয়ে ৪৫টি জায়গার সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ আবারও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে। সৌন্দর্যবর্ধনের বিনিময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সীমিত আকারে বিজ্ঞাপনী ফলক বসানোর অনুমতি দেওয়া হবে বলে ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে। বিলবোর্ড নীতিমালা চূড়ান্ত না করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আবার বিজ্ঞাপনী ফলক বসানোর অনুমতি দেওয়াকে ডিএনসিসির স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও নগরবিদ ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, নগরের সৌন্দর্য বাড়ানোর বিনিময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি তাদের বিজ্ঞাপন দেয়, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তা একটি নীতিমালার আওতায় বসাতে হবে। ২০১৫ সালের মে মাসে ঢাকা সিটির দুই মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজধানী থেকে বিলবোর্ড সরানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের প্রতিবছর সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হতো। ২০১৫ সালের ৩১ জুন মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই বিলবোর্ডের মেয়াদ নবায়ন করেনি। ফলে রাজধানীর সব বিলবোর্ডই আইনগতভাবে অবৈধ হয়ে যায়। গত বছরের ৪ অক্টোবর বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের সংগঠন আউটডোর অ্যাডভার্টাইজিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন মেয়র বরাবর এক চিঠি দেয়। তাতে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা স্ব-উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড ও ইউনিপোল অপসারণ করেছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বিলবোর্ড অপসারণ করে। আউটডোর অ্যাডভার্টাইজিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রাশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে বৈধ বিলবোর্ডগুলো নবায়ন করল না। তারপর এক কথায় সব বিলবোর্ড কেটে ফেলল। এই ব্যবসার সঙ্গে বহু মানুষ জড়িত সবাই পথে বসে গেছে। সিটি করপোরেশন ব্যবসাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর কোন রাস্তায় কী ধরনের কতটি বিলবোর্ড স্থাপন করা যাবে, তার সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা ও পরিকল্পনা তৈরির লক্ষ্যে গত বছর একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশে একটি খসড়া নীতিমালাও করা হয়েছে। কিন্তু এরপর আর কাজ এগোচ্ছে না। ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসার প্রসারে সহায়তা করে এবং সৌন্দর্য বাড়ায়, এমন বিলবোর্ড বসানোর অনুমতি দেওয়া হবে। সেটা অবশ্যই লোহা-লক্কড়ের বিলবোর্ড হবে না। আগের খসড়াটিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে নতুন আরেকটি খসড়া তরি হচ্ছে। কবে নাগাদ তা চূড়ান্ত হবে, তা বলা যাচ্ছে না। এদিকে ডিএনসিসি এলাকার সড়ক বিভাজক, সড়কদ্বীপ, উড়ালসড়কের ওপর ও নিচের অংশের সৌন্দর্যবর্ধন, সবুজায়ন ও ল্যান্ডস্কেপিং এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৪৫টি জায়গার জন্য ১৬৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৫০টি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। ২০০৪ সালে অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সড়কদ্বীপে গাছ লাগিয়েছে, ঝরনা ও মনোমুগ্ধকর ভাস্কর্য বসিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করা হয়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে যাচ্ছে, আবার অনেক প্রতিষ্ঠান তা আর নিয়মিত করছে না। নতুন অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিএনসিসি এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডিএনসিসির করা কমিটি প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করে এনেছে। কম সংখ্যা ও আয়তনের বিজ্ঞাপনী ফলক বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে যেসব প্রতিষ্ঠান, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা ও অর্থায়নে সাজসজ্জার কাজ করবে। এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের সৌন্দর্য বাড়ানোর বিনিময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু বিজ্ঞাপন ফলক বসানোর অনুমতি পাবে। তবে তা অবশ্যই ডিএনসিসির নির্দেশনা অনুসারে হতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.