নোটবন্দী নিয়ে বিরোধীরা পুরো এককাট্টা না হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগের দাবি উঠে গেল। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লিতে বিরোধী-বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা এই দাবিকে পরোক্ষে সমর্থন করেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, এই প্রথমবার দেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও কেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে না, তা বিস্ময়কর। একদিকে নোটবন্দী, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে যে জোট গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে, তা আগামী দিনে আরও জোরদার করে তোলা হবে বলে গতকাল যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেই এ জন্য আরও দুটি বৈঠক হবে। তৈরি করা হবে ন্যূনতম যৌথ কর্মসূচি। বিরোধী শিবির নোটবন্দী নিয়ে যে এখনো একজোট নয়, মঙ্গলবারের বৈঠকে তা স্পষ্ট। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, ডিএমকে, এআইইউডিএফ, জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ), মুসলিম লীগ ও ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার মতো বড় দলগুলো উপস্থিত থাকলেও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দল আসেনি। উত্তর প্রদেশের ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার পথ প্রশস্ত হলেও সমাজবাদী পার্টি এ বৈঠকে আসেনি। আসেনি বামপন্থীরা, এনসিপি, জনতা দল (সংযুক্ত), এআইএডিএমকে ও বহুজন সমাজ পার্টি। গত সোমবারই সরকার জানায়, নোটবন্দীর ঘোষণার পর মায়াবতীর দল দিল্লির একটি ব্যাংকে শতাধিক কোটি রুপি জমা দিয়েছে। মায়াবতীর ভাইয়ের খাতাতেও জমা পড়েছে কোটি রুপির বেশি। এই তল্লাশিতে ক্ষিপ্ত হলেও মায়াবতীর দল গতকালের বিরোধী সম্মেলনে যোগ দেয়নি। স্বাভাবিক কারণেই এই বিরোধী তৎপরতার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই সংশয় দেখা দিয়েছে। আধঘণ্টা বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রাহুল বলেন, নোটবন্দীর উদ্দেশ্য ছিল কালোটাকা উদ্ধার। অথচ মোদির সিদ্ধান্ত মানুষকে অর্থহীন করে তুলেছে। কেন এই দুরবস্থার মধ্যে তিনি দেশকে ফেললেন, তার জবাব পর্যন্ত তিনি দিলেন না। কংগ্রেস সহসভাপতি বলেন, গরিবদের টাকা মেরে মোদি বড়লোকদের ব্যাংকের ঋণ শোধ করছেন। মোদিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, জৈন হাওয়ালা ডায়েরিতে নাম থাকার জন্য লালকৃষ্ণ আদভানি পদত্যাগ করেছিলেন, সাহারা ডায়েরিতে নাম থাকার জন্য শীলা দীক্ষিত তদন্তে রাজি, অথচ মোদি কোনো কিছুতেই রাজি নন। প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নোটবন্দীর ৪৭ দিন কেটে গেছে। প্রধানমন্ত্রী এই কদিনে দেশকে ২০ বছর পিছিয়ে দিয়েছেন। নোটবন্দীকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেত্রী আবার সর্বভারতীয় বিরোধী রাজনীতিতে একটা জায়গা করে নিতে চাইছেন। এই প্রচেষ্টা তাঁকে নতুন করে কংগ্রেসের কাছে এনে দিয়েছে। গতকালের বৈঠকে রাহুলের পাশেই ছিল মমতার আসন। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ও বামপন্থীরা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.