প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এই আইন জাতীয় সংসদে পাস হলে নতুন করে অনেকেই রাষ্ট্রহীন হতে পারেন। বহু মানুষের নাগরিকত্ব এই আইনের মাধ্যমে অনিশ্চয়তায় পড়বে। গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কাউন্সিল অব মাইনোরিটিজ (সিওএম) আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত নাগরিক আইন সংশোধনী’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এই আইনের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে তা সংশোধনের দাবি জানান। আলোচনার শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিওএম’র বোর্ড সদস্য ব্যারিস্টার উম্মে হানি বিনতে আরিফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিওএম’র সভাপতি মো. জাকির হোসেন। বক্তারা বলেন, এই আইন পাস হলে বিশেষ করে উর্দুভাষী বাংলাদেশি নাগরিক যারা ২০০৮ সালে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছেন তারাও নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। একই সঙ্গে এই আইনটি বহু মানুষের নাগরিক অধিকার অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বহু মানুষ রাষ্ট্রহীনভাবে রয়েছে। নতুন করে আর কেউ যেন রাষ্ট্রহীন না হয় সেটি সরকারকেই দেখতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইনকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই আইনে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। শুধু নির্দিষ্ট ভাষাভাষী জনগণই নয়, আরো অনেক নাগরিক এই আইনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে উর্দুভাষীদের নাগরিকত্বের বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছিল। আবার প্রস্তাবিত নাগরিক আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, অন্য কোনো রায় ডিক্রি যাই থাকুক না কেন এই আইন কার্যকর হবে। এ এফ হাসান আরিফ বলেন, রাষ্ট্রের পলিসি থাকতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে তা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থি কি-না? আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, যেকোনো আইন পাস ও তা কার্যকর করার আগে আলোচনা, পর্যালোচনা করতে হয়। কিন্তু এই আইনের বিষয়ে কিছুই করা হয়নি। তিনি বলেন, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সকলের সামষ্টিক স্বার্থ রাষ্ট্রকেই দেখতে হবে। যদি কারো মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে অনিবার্যভাবে ওই ব্যক্তি অপরাধপ্রবণতা ও জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হবেন। রাষ্ট্রের পলিসি মেকারদের এটি বুঝতে হবে। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক, অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন, উর্দুভাষী বিহারীদের সংগঠন ইউএসপিওয়াইআরএম-এর সভাপতি মো. সাদাকাত খান ফাক্কু, সাধারণ সম্পাদক শাহিদ আলী বাবলু, এসএআইএলএস’র একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর শাহরিয়ার সাদাত, সিওএম’র প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট খালিদ হোসেন প্রমুখ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.