যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছেন বর্ষীয়ান কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার। এরই মধ্যে তিনি নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে বেশ কয়েকবার যাতায়াত করেছেন। বলা হচ্ছে, তিনি ডনাল্ড ট্রাম্পকে পরামর্শও দিচ্ছেন। তিনি তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন, ইউক্রেনের ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে। ফলে জোর আলোচনা চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও মস্কোর মধ্যে নিরাপদ পুনর্মিলন গড়ে তোলার জন্য তিনি কাজ করছেন। পূর্ব ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার করার বিনিময়ে তবে কি তিনি রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেষ্টা করছেন? এমন প্রশ্ন তুলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ৯৩ বছর বয়সী এই কূটনীতিক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রে ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন। তিনি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন। কয়েক দশক ধরে লব্ধ কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা ও লবিং ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এ জন্য নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে আসা-যাওয়া করেছেন। জার্মানির ট্যাবলয়েড পত্রিকা ডার বিল্ড তার এক খবরের শিরোনাম করেছে- ‘নতুন শীতল যুদ্ধ থামাবেন কিসিঞ্জার’। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই কূটনীতিক রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের কাজ করে যাচ্ছেন। এটাই যদি হয় তাহলে ক্রাইমিয়া যে রাশিয়ার অংশ এমন স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, ইউক্রেনের অংশ ক্রাইমিয়া। ২০১৪ সালের মার্চে তা দখল করে রাশিয়া। এখন ওই ভূখণ্ড রাশিয়ার- এমন স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এর বিনিময়ে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেন থেকে তার সেনাদের প্রত্যাহার করবে এবং সেখানকার বিদ্রোহীদের কাছে সামরিক সরবরাহ বন্ধ করবে। এসব বিদ্রোহী ওই সময় থেকে ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। ওই রিপোর্টে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। তবে সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ইউক্রেন নিয়ে একটি ‘মাস্টার প্লান’ তৈরি করছেন হেনরি কিসিঞ্জার। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনভিত্তিক অনলাইন পলিটিকো এক রিপোর্টে বলেছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘন ঘন সাক্ষাৎ হয়েছে যেসব মার্কিনির তার মধ্যে অন্যতম হেনরি কিসিঞ্জার। এ ছাড়া পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অভিনেতা স্টিভেন সিগাল, এক্সোন মোবাইলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেক্স টিলারসন। এর মধ্যে রেক্স টিলারসনকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। পলিটিকো তার রিপোর্টে বলেছে, ৯৩ বছর বয়সী হেনরি কিসিঞ্জার উল্লেখযোগ্য একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন। এ জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেছেন ট্রাম্পের সঙ্গে। প্রকাশ্যে তিনি তার প্রশংসা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছে রাশিয়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন রিপোর্ট যেমন প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্প, তেমনি কিসিঞ্জারও। হেনরি কিসিঞ্জার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তারা (রাশিয়া) হ্যাকিং করেছিল। কিন্তু যেভাবে এ নিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে আমার কাছে তেমনটা মনে হয় না। রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের সময় তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে ট্রাম্পের সাবেক প্রচারণা বিষয়ক ম্যানেজার পল মানাফোর্ট এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ক্রাইমিয়া দখল করে নেয় তখন এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, এটা কখনো হতে পারে না। কিন্তু গত আগস্টে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এক সাংবাদিককে বলেছেন, আমি যে ক্রাইমিয়ার কথা শুনেছি সেখানকার মানুষের রাশিয়ার সঙ্গে থাকা উচিত। হেনরি কিসিঞ্জার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরার্ড ফোর্ডের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। পলিটিকে রিপোর্টে বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বলে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ক্ষমতা বা শক্তির ভারসাম্যের কথা। তার মতে, এমন সমতা আনা গেলে তাতে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার উন্নতি ঘটবে। ওদিকে ১৯৬০ আরে দশকের ও ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে ইন্দো-চায়নায় গোপনে মার্কিন বোমা হামলা হয়। এর নেপথ্যে ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তাই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে রাশিয়ার বিতর্কিত ভূমিকা সত্ত্বেও তাদেরকে পুরস্কৃত করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ডাচ থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত সিসিয়েরো ফাউন্ডেশনের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ মারসেল ভ্যান হারপেন বলেছেন, আমি মনে করি কিসিঞ্জার একটি কূটনৈতিক অপরাধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বাস্তববাদী। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি আন্তর্জাতিক সমতাবাদী। কিন্তু মানবাধিকার বা গণতন্ত্রের কোনো কথা নেই তার কাছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.