এমসি কলেজের ঐতিহাসিক পুকুরপাড়ে বান্ধবীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল খাদিজা আক্তার নার্গিস। এমন সময় বদরুল নামের এক যুবক তার কাছে যায়। গিয়েই এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে নার্গিসকে। বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তনাদ করে উঠে নার্গিস। দৌড়ে পালাতে যায়। কিন্তু থেমে থাকেনি হামলাকারী বদরুল। পিছু ধাওয়া করে নার্গিসের মাথা, দেহে উপর্যুপরি কোপায়। আর এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত ছাত্রীরা চিৎকার করলে ছাত্ররা এগিয়ে আসেন।
তারা আটক করে বদরুলকে পিটুনি দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। গতকাল বিকালে সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে আলোচিত এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নার্গিসের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। সন্ধ্যায়ই তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছে। রাত ৯টা পর্যন্ত নার্গিসের শরীরে অস্ত্রোপচার চলছিল। এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে এর আগে এতো বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেনি। ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে সিলেটে। রাতেই অপারেশন থিয়েটারে নার্গিসকে দেখতে যান সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনায় বিকেল ৫ টায়। চলছে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। খাদিজা আক্তার নার্গিস সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী। মহিলা কলেজের কেন্দ্র হচ্ছে এমসি কলেজ। এ কারনে পরীক্ষা দিতে নার্গিস দুপুরে এমসি কলেজে যায়। দুপুর ১ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সে এমসি কলেজের পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে এমসি কলেজের ঐতিহাসিক পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আরেক বান্ধবীর জন্য অপেক্ষা করছিল। এ সময় নার্গিসের সঙ্গে আরো কয়েকজন ছাত্রী ছিল। এমন সময় বদরুল ইসলাম গিয়ে নার্গিসের সামনে দাঁড়ায়। কোনো কথা না বলেই পেছন থেকে চাপাতি বের করে নার্গিসকে এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করে বদরুল। পরপর দুটি কোপ মাথায় দেওয়া মাত্র বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করে নার্গিস। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ও দেয়। খানিক দৌড়ানোর পর বদরুল তার শরীরে আরো কয়েকটি কোপ দেয়। উপর্যুপরি কোপানোর কারণে মাটিতে পড়ে যায় নার্গিস। এ দৃশ্য দেখে নার্গিসের সঙ্গে থাকা ছাত্রীরা ভয়ে দৌড়াতে থাকে। তবে, কয়েকজন ছাত্র এগিয়ে আনে। ঘটনার পরপরই বদরুল পালানোর চেষ্টা করলে ছাত্ররা এসে তাকে আটক করে পিটুনি দেন। পরে এমসি কলেজের ফটকে থাকা পুলিশ এসে তাকে আটক করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। আর নার্গিসকে গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে নার্গিসকে দ্রুত পাঠিয়ে দেয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। সন্ধ্যা ৭টায় তার অপারেশন শুরু হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নার্গিসের মাথায় দুটি কোপ রয়েছে। মাথার দুটি স্থান থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে তার। এ কারণে তাকে রক্ত দেয়া হচ্ছে। সে আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা যাচ্ছেন। নার্গিসের বাড়ি সিলেট শহরতলীর মোগলগাওয়ের আউসা গ্রামে। তার পিতা মাসুক আহমদ সৌদি প্রবাসী। মা গুরুতর অসুস্থ। তার ওপর হামলার খবর শুনে খালা সাজনা বেগম আত্মীয়স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। তারা অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিলেন। সাজনা বেগম জানিয়েছেন, নার্গিসকে কখনোই তারা একা কলেজে পাঠাতেন না। সব সময় পরিবারের লোকজন কলেজে নিয়ে আসতে আবার নিতেন। পরীক্ষার সময়ও পরিবারের লোকজন সঙ্গে থাকেন। কিন্তু তার মা গুরুতর অসুস্থ থাকায় নার্গিস একাই গতকাল কলেজে আসে। হামলাকারী যুবকের সঙ্গে নার্গিসের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি। এদিকে, সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণের উপ-কমিশনার বাসুদেব বণিক জানিয়েছেন, হামলাকারী একজনই। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পিটুনি দেয়ার কারণে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারী বদরুল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি ছাতক উপজেলায় বলে জানা গেছে। এদিকে, সন্ধ্যায় যখন হাসপাতালে নার্গিসের দেহে অস্ত্রোপচার চলছিল তখন সেখানে ছুটে যান সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে নার্গিসকে দেখেন আসেন। এসে সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটিকে একবার দেখে আমি আর তাকাতে পারেনি। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপানো হয়েছে। চিকিৎসকরা তার অস্ত্রোপচার করছেন। তিনি সবার কাছে মেয়েটির জন্য দোয়া চান। বলেন, হামলাকারীর যাতে শাস্তি হয় সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনাকারীরা কোনোভাবে ছাড় পাবে না। সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দও সন্ধ্যায় এসে অপারেশন থিয়েটারে মেয়েটিকে দেখে গেছেন। তিনি বলেন, এমসি কলেজের শিক্ষক, ছাত্র সবাই হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। ক্যাম্পাসে পুলিশ ছিল। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় যাতে বিঘœ না ঘটে সে ব্যাপারে নির্দেশনা ছিল। হামলাকারী গ্রেপ্তার হয়েছে সেটা ভালো দিক। এখন তার বিচার করতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.