রাইজিংবিডি: উৎসব মানেই আলোকিত কিছু, আনন্দময় কিছু। আবার অন্ধকার ও খারাপ সবকিছুকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে পারে উৎসব। অন্তত চীনের ফানুস উৎসবে গেলে এমনটাই মনে হবে।
দেশজুড়ে লাখ লাখ ফানুস জ্বালিয়ে চীনারা এ উৎসব পালন করে। দিবসটি পালিত হয় চীনা বর্ষপঞ্জির চান্দ্রমাসের প্রথম ১৫ দিন। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় ইউয়ানজিও বা সানজিউয়ান। প্রচলিত ক্যালেন্ডারে উৎসবটা হয় ফেব্রুয়ারি বা মার্চে।
মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরে শরতের সময় একই ধরনের উৎসব দেখা গেলেও চীনেরটা একেবারেই আলাদা। ফানুস উৎসবের অন্যতম বার্তাটা হলো ভেতরকার যাবতীয় অন্ধকার দূর করে সবার মাঝে বিশুদ্ধতার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। আর তাই এ উৎসবে সবচেয়ে বেশি উত্সাহী হতে দেখা যায় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের।
ফানুস উৎসবে বুদ্ধের স্মরণে ফানুস জ্বালায় সবাই। এ উৎসবের প্রচলন করেন চীনের সং রাজবংশের একজন সম্রাট । তখন থেকেই রাজপ্রাসাদসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে ফানুস উৎসবে ব্যাপক আলোকসজ্জার প্রচলন শুরু হয়।
এ ধরনের উৎসব জনপ্রিয় হতে খুব একটা সময় নেয় না। ফানুস উৎসবও এর ব্যতিক্রম নয়। সময়ের সঙ্গে এ উৎসব ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। রাতের মোহনীয় আলোকসজ্জা দেখতে এ সময় চীনে ভিড় করেন পর্যটকরা। শিশুরাও হরেক রঙের বাতি নিয়ে সড়ক সাজায়। ইদানীং আবার এ উৎসবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আয়োজন করা হচ্ছে নানা মজার প্রতিযোগিতার।
এ উৎসবের শুরু নিয়ে অনেক জনশ্রুতি আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ধারণাটি হলো স্বর্গের দেবতা তায়িকে তুষ্ট করতে ১০২ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ থেকে হান সাম্রাজ্যের রাজা উদি এই উৎসবের প্রচলন করেন। রাজার নির্দেশ ছিল, দেশজুড়ে এমন এক উৎসব পালন করতে হবে, যার কারণে পুরো এলাকা সারা রাত আলোকিত থাকবে। অনেকের মতে, তাওবাদি ধর্মের অনুসারীদের কাছ থেকেই এ উৎসব এসেছে।
আরেকটি মজার ইতিহাস হলো, একবার স্বর্গ থেকে এক সারস উড়ে চীনের একটি গ্রামে চলে আসে। গ্রামবাসী পাখিটাকে মেরে ফেলতেই স্বর্গের দেবতারা রুষ্ট হয়ে যান। তারা গ্রামটিকে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এটা শুনে গ্রামের লোকজন পড়ে গেল মহাচিন্তায়। এক বুদ্ধিমান লোক বলল, সবাই যেন রাতে লন্ঠন জ্বালায়, আর আতশবাজি পোড়ায়। এতে স্বর্গের দেবতারা মনে করবেন, গ্রামটা এমনিতেই জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে, বাড়তি করে আর দুর্যোগ পাঠানোর দরকার নেই। কালক্রমে এটাই হয়ে গেল ফানুস উৎসব।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.