যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে তাঁর ‘পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে’ কাজ করার ইচ্ছা আছে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হ্যাকিংয়ের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, তা-ও বাতিল করা হবে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর আঁতাতের গুঞ্জনের মধ্যেই শুক্রবার প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিজের এই অবস্থান তুলে ধরেন। এর মধ্যেই সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, হ্যাকিং নিয়ে ওয়াশিংটন-মস্কোর পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলার সময়ে ট্রাম্পের মনোনীত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের দফায় দফায় ফোনালাপ হয়েছিল। রাশিয়ার ওপর আরোপ করা নতুন নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হবে কি না—ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর সে প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘একটি ন্যূনতম মেয়াদ পর্যন্ত’ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এরপর তা তুলে দেওয়া যেতে পারে। ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া যদি সত্যিই আমাদের ভালো কাজে সাহায্য করে এবং আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে তার ওপর কেন অবরোধ আরোপ করে রাখা হবে?’ যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ‘এক চীন’ নীতি সমর্থন করে তাইওয়ানকে স্বীকৃতিদানে বিরত থেকে এসেছে। তবে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই এক চীন নীতিতে অবিচল থাকবে কি না, তা চীনের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের আপাত সখ্যর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে একটি আলোচিত বিষয়। তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই পুতিনের নেতৃত্বের প্রশংসা করে এসেছেন। মার্কিন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠার পরও দৃশ্যত রাশিয়ার প্রতি বীতশ্রদ্ধ নন ট্রাম্প। সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধানেরা এক সম্মিলিত প্রতিবেদনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে সাইবার হামলার অভিযোগ আনেন। এর বাইরে গত মঙ্গলবার নিশ্চিত না করা সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএনসহ মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অতি গোপনীয় একটি ভিডিও ফুটেজ রাশিয়ার হাতে রয়েছে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় রাশিয়া অর্থ দিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এদিকে রয়টার্স বলেছে, তিনটি সূত্র তাদের নিশ্চিত করেছে, হ্যাকিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর ওয়াশিংটন থেকে রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কার ও রাশিয়ার ওপর প্রেসিডেন্ট ওবামার নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাল্টা ব্যবস্থা না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও রুশ কূটনীতিকের মধ্যে পাঁচবার ফোনালাপ হয়। এ খবর রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প শিবিরের আঁতাতের ধারণাকে আরও জোরালো করবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া এই বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করবে না বলে জানিয়েছে। রয়টার্স বলছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন কর্মকর্তা তাদের আলাদাভাবে জানিয়েছেন, ওবামা ২৯ নভেম্বর রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ট্রাম্প শিবির রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। ট্রাম্পের মনোনীত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন এবং রুশ কূটনীতিক কিসলিয়াক দফায় দফায় ফোনালাপ করেন। ধারণা করা হয়, রাশিয়া যাতে একই ধরনের ব্যবস্থা না নেয়, সে জন্য ফ্লিন চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। অন্যদিকে, মার্কিন নির্বাচন প্রভাবিত করতে রাশিয়া সত্যিই গুপ্তচরবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছিল কি না, তার তদন্ত শুরু করেছেন সিনেটররা। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সিনেট গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটি এই তদন্ত করছে। ওই কমিটি বলেছে, ঘটনা তদন্তে যেকোনো কর্মকর্তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন জারি করা হতে পারে। ওয়াশিংটনে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ শুরু: ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রে অধিকারকর্মীরা সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভ শুরু করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, রিপাবলিকান নেতারা মুসলিম ও মেক্সিকোর নাগরিকসহ সব ধরনের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড আল শার্পটনের নেতৃত্বে গতকাল শনিবার ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীদের জড়ো হওয়ার কথা। ন্যাশনাল মল থেকে শুরু হয়ে একটি শোভাযাত্রা মার্টিন লুথার কিং মেমোরিয়ালে শেষ হবে। সেখানে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ সমবেত হওয়ার কথা। এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজক আল শার্পটন বলেন, তাঁরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই বার্তা দিতে চান যে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ দেশটির জনগণ মেনে নেবে না। ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেবেন। ওই তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন এ ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি থাকবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.